শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

কোমোডো ড্রাগন: বিশ্বের বৃহত্তম গিরগিটি

কোমোডো ড্রাগন

কোমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গিরগিটি। এরা ভ্যারানিডি (Varanidae) পরিবারভুক্ত এবং বৈজ্ঞানিক নাম “Varanus komodoensis”। দৈত্যাকার আকৃতি, শিকার ধরার ক্ষমতা এবং রহস্যময় জীবনযাপনের জন্য এরা পৃথিবীর অন্যতম মুগ্ধকর সরীসৃপ।

কোমোডো ড্রাগন শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু দ্বীপে পাওয়া যায়, যেমন “কোমোডো, রিনকা, ফ্লোরেস, গিলি মোতাং এবং পাদার দ্বীপ”। এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল শুষ্ক সাভানা, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন এবং খোলা তৃণভূমি। কোমোডো দ্বীপে অবস্থিত “কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক” এদের প্রধান সুরক্ষিত এলাকা। এই ড্রাগনের দৈর্ঘ্য গড়ে ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং ওজন ৭০-৯০ কেজি। এদের শরীর পেশিবহুল, শক্তিশালী লেজ, এবং ধারালো নখযুক্ত পা। মাথার আকৃতি ত্রিকোণ, আর মুখে ধারালো দাঁতের পাশাপাশি লালা (saliva) থাকে, যা বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া ও টক্সিনে পরিপূর্ণ।

খাদ্যাভ্যাস

কোমোডো ড্রাগন মাংসাশী এবং এরা দক্ষ শিকারি। ছোট প্রাণী থেকে শুরু করে হরিণ, শূকর, এমনকি ছোট মাপের নিজ প্রজাতিও এদের খাদ্যতালিকায় পড়ে। শিকারের প্রতি চূড়ান্ত ধৈর্য এবং শক্তি প্রদর্শন করে এরা শিকার করে। এদের বিষাক্ত লালা শিকারের রক্তপ্রবাহে বিষক্রিয়া ঘটায়, যা শিকারকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলে।

Komodo Dragon where komodo dragons come from scaled

প্রজনন

কোমোডো ড্রাগনের প্রজনন প্রক্রিয়া অত্যন্ত চমকপ্রদ। স্ত্রী ড্রাগন বছরে একবার ডিম পাড়ে এবং প্রতিবারে ১৫-৩০টি ডিম দিতে পারে। ডিম ফোটাতে প্রায় ৮ মাস সময় লাগে। মজার ব্যাপার হলো, স্ত্রী ড্রাগন “পারথেনোজেনেসিস” নামক একটি প্রক্রিয়ায় পুরুষের সাহায্য ছাড়াই ডিম পাড়তে সক্ষম।

হুমকি ও সংরক্ষণ

কোমোডো ড্রাগনের সংখ্যা দিন দিন কমছে, যা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। এদের জন্য হুমকি হলো:
– আবাসস্থলের ধ্বংস
– শিকার ও পাচার
– জলবায়ু পরিবর্তন

বর্তমানে কোমোডো ড্রাগনকে আইইউসিএন (IUCN) এর রেড লিস্টে বিপদগ্রস্ত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা এদের সুরক্ষায় কাজ করছে।

মজার তথ্য

১. কোমোডোর দৌড়ানোর গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
২. এরা শিকারকে ৫ কিলোমিটার দূর থেকেও গন্ধ পেয়ে খুঁজে নিতে পারে।
৩. এই ড্রাগন সাধারণত একা চলাফেরা করে, তবে শিকারের সময় দলবদ্ধ হয়।

কোমোডো ড্রাগন প্রকৃতির এক বিস্ময়। এরা শুধুমাত্র গিরগিটি নয়, বরং প্রাণিজগতের এক শক্তিশালী এবং রহস্যময় সদস্য। এদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
গোলাপি শালিক
নিবন্ধ

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের

Read More »
ঘুঘু পাখি
প্রাণীজগৎ

ঘুঘু পাখি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য

বাংলার প্রকৃতিতে ঘুঘু পাখি এক পরিচিত এবং প্রিয় নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia এবং এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার পরিবেশে এই পাখি তার

Read More »
হট্টিটি
প্রাণীজগৎ

হট্টিটি: প্রকৃতির এক চঞ্চল প্রহরী

হট্টিটি, বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus, আমাদের দেশের একটি পরিচিত এবং চঞ্চল পাখি। এটি “Red-Wattled Lapwing” নামেও পরিচিত। এর দেহের আকৃতি, স্বতন্ত্র ডানা, এবং বিশেষভাবে চোখে

Read More »
মেরু ভালুক
প্রাণীজগৎ

মেরু ভালুক: আর্টিকের রাজকীয় শিকারি

পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ শিকারি মেরু ভালুক সবচেয়ে শক্তিশালী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম `Ursus maritimus’, যার অর্থ “সমুদ্রের ভালুক”। বরফে আচ্ছাদিত আর্টিক অঞ্চলে

Read More »