হট্টিটি, বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus, আমাদের দেশের একটি পরিচিত এবং চঞ্চল পাখি। এটি “Red-Wattled Lapwing” নামেও পরিচিত। এর দেহের আকৃতি, স্বতন্ত্র ডানা, এবং বিশেষভাবে চোখে পড়া লাল রঙের উঁচু মাংসল অংশ (wattle) একে অন্যান্য পাখি থেকে আলাদা করে।
চেহারা এবং বৈশিষ্ট্য
হট্টিটির মাথা ও বুক কালো এবং পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত বাদামি রঙের। এর লাল চোখ এবং লাল-কালো উঁচু অংশ একে চেনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাখিটির পা লম্বা ও হলুদ রঙের। এরা উড়তে পারদর্শী এবং উড়ার সময় এদের ডানার সাদা-কালো কন্ট্রাস্ট খুবই স্পষ্ট হয়।
আবাসস্থল
হট্টিটি মূলত এশিয়া মহাদেশের পাখি। এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, এবং শ্রীলঙ্কায় সহজেই দেখা যায়। এরা সাধারণত মাঠ, নদীর তীর, জলাভূমি, এবং কৃষিজমিতে বসবাস করে।
খাদ্যাভ্যাস
এই পাখি প্রধানত কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এছাড়াও ছোট ছোট পোকা, শামুক, এবং উদ্ভিদের বীজও এদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এরা মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে খাদ্য সংগ্রহ করে।
প্রজনন
হট্টিটির প্রজনন ঋতু সাধারণত বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল। এরা খোলা মাটিতে, কখনো কখনো ঝোপের আড়ালে সরল ধরনের বাসা তৈরি করে। মজার বিষয় হলো, এরা নিজেদের ডিম রক্ষায় খুবই সজাগ। ডিমে বিপদ দেখলে এরা খুব জোরে “ডিডি-ডিডি” শব্দে ডেকে সবাইকে সতর্ক করে দেয়। এই পাখি প্রকৃতির এক প্রহরী হিসেবে পরিচিত। যখনই কোনো বিপদ অনুভব করে, তখন উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। এদের ডাক খুবই কণ্ঠস্বরপূর্ণ এবং দূর থেকে শোনা যায়। এটি শিকারি প্রাণী কিংবা মানুষের উপস্থিতি টের পেলে দ্রুত সতর্ক সংকেত দেয়।
পরিবেশগত গুরুত্ব
হট্টিটি প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আবাসস্থল ধ্বংস, কৃষিজমিতে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, এবং জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। যদিও এটি এখনো বিপন্ন নয়, তবে এদের রক্ষা করতে আমাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
হট্টিটি প্রকৃতির এক অনন্য পাখি, যা আমাদের পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ডাক, চঞ্চলতা, এবং সতর্কতার জন্য এটি পাখি প্রেমীদের কাছে প্রিয়। প্রকৃতির এই চঞ্চল প্রহরীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, যাতে ভবিষ্যতেও আমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।
হট্টিটি পাখি নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন: