সাহারা মরুভূমি (Sahara Desert), যা বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি হিসেবে পরিচিত, আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে অবস্থিত একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এর আয়তন প্রায় ৯.২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, যা পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সমান এবং ইউরোপ মহাদেশের প্রায় সমান। সাহারা শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ “সাহরা” থেকে, যার অর্থ মরুভূমি। এটি প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন
সাহারা মরুভূমি আফ্রিকার উত্তরে আটটি দেশের উপর বিস্তৃত। এগুলো হল:
আলজেরিয়া
চাদ
মিশর
লিবিয়া
মালি
মরিতানিয়া
মরক্কো
সুদান
তিউনিসিয়া
এছাড়া, সাহারার দক্ষিণাঞ্চল সাহেল অঞ্চলের সাথে মিলিত হয়েছে। সাহেল অঞ্চল আফ্রিকার আধা-শুষ্ক এক বিস্তীর্ণ এলাকা, যা সাহারার শুষ্কতা থেকে ক্রমশ সবুজভূমিতে পরিণত হয়েছে। সাহারা পূর্বে লোহিত সাগর এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তরে এটি আটলাস পর্বতমালা এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলে শেষ হয়েছে।
সাহারা মরুভূমি আয়তন ও বিস্তৃতি
সাহারা মরুভূমির মোট আয়তন প্রায় ৯.২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি পুরো যুক্তরাষ্ট্র বা প্রায় পুরো ইউরোপের সমান। এই বিশাল আয়তনের কারণে সাহারা পৃথিবীর এক অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক বিস্ময়।
সাহারার বিস্তৃতি অঞ্চলভিত্তিক:
পশ্চিমে: আটলান্টিক মহাসাগর
পূর্বে: লোহিত সাগর এবং নীল নদের অববাহিকা
উত্তরে: ভূমধ্যসাগর এবং আটলাস পর্বতমালা
দক্ষিণে: সাহেল অঞ্চল, যা দক্ষিণ সাহারার সংলগ্ন আধা-শুষ্ক অঞ্চল
সাহারা মরুভূমির প্রাকৃতিক গঠন ও ভূপ্রকৃতি
সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর অন্যতম চমকপ্রদ প্রাকৃতিক অঞ্চল। এর প্রাকৃতিক গঠন ও ভূপ্রকৃতি এতটাই বৈচিত্র্যময় যে এটি একদিকে যেমন বালিয়াড়ি ও শুষ্ক সমভূমির সমষ্টি, অন্যদিকে তেমনি পর্বতশ্রেণি, মরুদ্যান এবং লবণাক্ত সমভূমি দ্বারা গঠিত। সাহারার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক গঠনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য একে পৃথিবীর বুকে একটি অনন্য স্থান হিসেবে পরিচিত করেছে। সাহারার একটি বড় অংশ বালিয়াড়ি দ্বারা আবৃত, যা উচ্চতায় প্রায় ১৮০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে, মরুভূমির প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা পাথুরে সমতল ভূমি।
প্রধান পর্বতশ্রেণি
সাহারার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি রয়েছে, যেমন অ্যাহগার পর্বত (আলজেরিয়া) এবং টিবেস্তি পর্বত (চাদ)। এসব পর্বতে প্রায়ই আগ্নেয়গিরি দেখা যায়। সাহারার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল এমি কৌসি, যা একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং এর উচ্চতা প্রায় ৩,৪১৫ মিটার।
সাহারা মরুভূমির পর্বতশ্রেণিগুলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিস্তৃত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি হলো:
১. টিবেস্টি পর্বতমালা
টিবেস্টি পর্বতমালা সাহারার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, বিশেষত চাদ এবং লিবিয়ার মধ্যে অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণিতে অবস্থিত সাহারার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এমি কৌসি, যার উচ্চতা প্রায় ৩,৪১৫ মিটার। টিবেস্টি একটি আগ্নেয়গিরি অঞ্চল। এখানে বেশ কিছু সুপ্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে। টিবেস্তি অঞ্চলে প্রাচীন শিলা চিত্র এবং খোদাইয়ের নিদর্শন পাওয়া যায়, যা প্রাগৈতিহাসিক মানুষের অস্তিত্বের সাক্ষী।
২. হোগার পর্বত
হোগার পর্বতমালা আলজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণি মূলত আগ্নেয়গিরি শিলার দ্বারা গঠিত এবং এটি অত্যন্ত প্রাচীন। হোগার অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর চিত্তাকর্ষক শিলাস্তম্ভ এবং অনন্য ভৌগোলিক গঠন।রএখানকার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে সহনীয় হওয়ায় এটি ঐতিহাসিকভাবে সাহারার যাযাবর জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।
৩. এয়ার পর্বত
এয়ার পর্বতশ্রেণি সাহারার পশ্চিমাংশে, বিশেষত নাইজারে অবস্থিত। এটি একটি শিলাময় মালভূমি, যার গঠন গ্রানাইট এবং আগ্নেয়গিরি শিলার সমন্বয়ে। এয়ার পর্বতশ্রেণিতে অনেক মরুদ্যান এবং শীতল অঞ্চল রয়েছে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বতশ্রেণি পরিব্রাজক এবং বাণিজ্যিক কাফেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
সাহারা মরুভূমির মরুদ্যান
সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি, যার বিস্তৃতি উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশজুড়ে। শুষ্কতার জন্য পরিচিত হলেও সাহারা মরুভূমির মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রাণের স্বাক্ষর—মরুদ্যান। এই মরুদ্যানগুলো সাহারার কঠোর পরিবেশে একপ্রকার সবুজ আশ্রয়স্থল, যেখানে জল, গাছপালা এবং মানুষের বসবাসের সুযোগ রয়েছে।
মরুদ্যানের ভূমিকা
মরুদ্যান হল মরুভূমির এমন অঞ্চল যেখানে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বা প্রাকৃতিক জলাধার পৃষ্ঠে উঠে আসে। এটি গাছপালা জন্মানোর এবং মানুষের বসবাসের উপযোগী স্থান তৈরি করে। সাহারার মরুদ্যানগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সাহারা মরুভূমির প্রধান মরুদ্যানসমূহ
সাহারায় অনেক মরুদ্যান রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মরুদ্যান হলো:
১. সিওয়া মরুদ্যান
সিওয়া মরুদ্যান মিশরের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি খেজুর গাছ এবং জলপাই গাছের জন্য বিখ্যাত। প্রাচীনকালে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। এখানে আলেকজান্ডারের আমলের বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।
২. তাফিলালেট
তাফিলালেট মরুদ্যান মরক্কোতে অবস্থিত এবং এটি সাহারার বৃহত্তম মরুদ্যানগুলোর মধ্যে একটি। এটি খেজুর চাষের জন্য বিখ্যাত এবং এখানকার খেজুর মরক্কো থেকে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা হয়। এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে সাহারার বাণিজ্য পথের কেন্দ্র ছিল।
৩. উবারি মরুদ্যান
উবারি মরুদ্যান লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এটি লেক উম এল মা-এর জন্য বিখ্যাত, যা একটি প্রাকৃতিক লবণাক্ত হ্রদ। এখানে পর্যটকরা হ্রদের চারপাশের বালিয়াড়ি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।
মরুদ্যানের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
সাহারার মরুদ্যানগুলোতে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যেমন:
১. ভূগর্ভস্থ জল
মরুদ্যানগুলো ভূগর্ভস্থ জলাধার বা “আকুইফার” দ্বারা গঠিত। ভূগর্ভস্থ জলের প্রবাহ প্রাকৃতিক উৎসের মাধ্যমে পৃষ্ঠে উঠে আসে, যা এই অঞ্চলে প্রাণের সঞ্চার করে।
২. উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ
মরুদ্যানে খেজুর, জলপাই, এবং অন্যান্য মরুভূমি-সহনশীল গাছপালা জন্মায়। স্থানীয় প্রাণীদের জন্য এটি খাদ্য ও আশ্রয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৩. আবহাওয়া
মরুদ্যান অঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে সহনীয়, যা গাছপালা এবং মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
মানবজীবনে মরুদ্যানের গুরুত্ব
সাহারার মরুদ্যানগুলো স্থানীয় জনগণের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মরুদ্যানে কৃষি সম্ভব হয়, বিশেষত খেজুর এবং অন্যান্য ফসলের চাষ। অনেক মরুদ্যান বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মরুদ্যানগুলো যাযাবর সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষকে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
জলবায়ু
সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ২৫০ মিলিমিটার বা তারও কম। সাহারার জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর চরম উষ্ণতা। গ্রীষ্মে দিনের তাপমাত্রা প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, যখন রাতের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই অনেকটা কমে যেতে পারে। শীতকালে রাতের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে।
বায়ুপ্রবাহ
সাহারায় প্রায়ই ধুলোর ঝড় দেখা যায়, যা “হাবুব (haboob)” নামে পরিচিত। এই ঝড়গুলো ধুলোর বিশাল পরিমাণ বাতাসে তুলে নিয়ে যায় এবং তা আশেপাশের অঞ্চলেও প্রভাব ফেলে। সাহারার ধুলা প্রায়ই আটলান্টিক মহাসাগর এবং আমাজন রেইনফরেস্টে পৌঁছায়।
জীববৈচিত্র্য
সাহারা মরুভূমি তার কঠোর পরিবেশ সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল।
সাহারার উদ্ভিদজগৎ খুবই সীমিত, তবে এখানে শুষ্ক পরিবেশে অভিযোজিত উদ্ভিদ দেখা যায়। এসব উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল খেজুরগাছ, অ্যাকাসিয়া, এবং কাঁটাঝোপ। মরুদ্যানে বিভিন্ন ধরনের ফসল, যেমন খেজুর, বার্লি, এবং গম চাষ করা হয়। সাহারার প্রাণীজগৎও অভিযোজনের একটি উদাহরণ।
সাহারা মরুভূমির প্রাণীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
ডোরাকাটা হায়েনা Striped Hyena
সাহারান চিতা Saharan Cheetah
ফেনেক শিয়াল Fennec Fox
স্যান্ড ফিশ (এক ধরনের টিকটিকি) Sand Fish
বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ এবং কীটপতঙ্গ
এই প্রাণীগুলো উষ্ণ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষ অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফেনেক শিয়ালের বড় কান তাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
মানববসতি ও জীবনধারা
সাহারা মরুভূমি মানুষের বসতির জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও, এখানে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বসবাস করছে। সাহারার অধিবাসীরা সাধারণত বেদুইন এবং তুয়ারেগ জাতিগোষ্ঠীর অংশ। এদের জীবনধারা প্রধানত যাযাবর এবং তারা উটের ওপর নির্ভর করে তাদের চলাচল এবং পণ্য পরিবহনের জন্য।
তুয়ারেগ জাতি
তুয়ারেগরা সাহারার একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতিগোষ্ঠী, যাদের সংস্কৃতি এবং জীবনধারা মরুভূমির পরিবেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানিয়ে গেছে। তারা উট ব্যবহার করে মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চল অতিক্রম করে এবং মূলত লবণ, সোনা, এবং অন্যান্য পণ্যের ব্যবসা করে। তুয়ারেগরা তাদের ঐতিহ্যবাহী নীল পোশাক এবং মুখোশের জন্য পরিচিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
সাহারা মরুভূমি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি প্রাচীনকালে বিভিন্ন সভ্যতার জন্য বাণিজ্য পথ হিসেবে কাজ করেছে। সাহারার মধ্য দিয়ে কারাভান বা উটের কাফেলার মাধ্যমে সোনা, লবণ, এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা হতো।
ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য পথ
ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য পথ প্রাচীন এবং মধ্যযুগে উত্তর এবং পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। এই পথের মাধ্যমে সোনা, লবণ, হাতির দাঁত, এবং দাস ব্যবসা করা হতো। তিম্বুক্তু ছিল এই বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
পর্যটন ও গবেষণা
বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারা তার বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সাহারা শুধু বালিয়াড়ি নয়, বরং এটি এক ধরণের রহস্যময় অভিজ্ঞতার উৎস, যেখানে প্রাচীন ইতিহাস, স্থাপত্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতির মিলন ঘটে। পর্যটকরা এখানে সাহসিকতাপূর্ণ কার্যক্রম এবং অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন।
সাহারা মরুভূমিতে অনেক দর্শনীয় স্থান এবং কার্যক্রম রয়েছে যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
১. মেরজুগা, মরক্কো
বালিয়াড়ি ভ্রমণ: মেরজুগার সুবিশাল বালিয়াড়ি পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এখানে উটের পিঠে ভ্রমণ এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা একটি বিশেষ আকর্ষণ।
স্টার গেজিং: মেরজুগার আকাশ রাতে তারার আলোয় আলোকিত হয়, যা পর্যটকদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
২. তাসিলি নাজ্জার, আলজেরিয়া
শিলাচিত্র: এই স্থানটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং এখানে প্রাগৈতিহাসিক শিলাচিত্রের অসাধারণ সংগ্রহ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: তাসিলির শিলাস্তম্ভ এবং উপত্যকাগুলি এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য উপহার দেয়।
৩. সিওয়া ওয়েসিস, মিশর
প্রাকৃতিক ঝর্ণা: সিওয়ার ঝর্ণাগুলি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
প্রাচীন ইতিহাস: সিওয়া ওয়েসিস আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের স্মৃতি এবং প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
৪. উবাড়ি মরুদ্যান, লিবিয়া
লেক উম এল মা: এই লবণাক্ত হ্রদটি উবাড়ি মরুদ্যানের একটি অনন্য আকর্ষণ।
বালিয়াড়ির সৌন্দর্য: উবাড়ি বালিয়াড়ি তার স্বাভাবিক রঙ এবং আকর্ষণীয় গঠনের জন্য বিখ্যাত।
৫. তেনের মরুভূমি, নাইজার
সাহসিক কার্যক্রম: এই অঞ্চলটি অফ-রোড ড্রাইভিং এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য পরিচিত।
প্রাকৃতিক গঠন: তেনেরের বিশাল বালিয়াড়ি এবং শিলাস্তম্ভ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
সাহারায় পর্যটকদের কার্যক্রম
সাহারা মরুভূমিতে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম উপভোগ করতে পারেন।
১. উটের পিঠে ভ্রমণ
উটের পিঠে মরুভূমি ভ্রমণ সাহারার অন্যতম জনপ্রিয় কার্যক্রম। এটি পর্যটকদের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা।
২. রাতের ক্যাম্পিং
সাহারায় রাতের ক্যাম্পিং একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তারাভরা আকাশের নিচে আগুন জ্বালিয়ে স্থানীয় খাবার এবং গান উপভোগ করা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
৩. বালিয়াড়ি সাফারি
সাহারার বিশাল বালিয়াড়িতে জীপ সাফারি করা একটি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা।
৪. স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়
স্থানীয় বেদুইন এবং তুয়ারেগ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা পর্যটকদের কাছে সাহারার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরে।
সাহারার পর্যটন ব্যবস্থার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
সুবিধা
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: সাহারার পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংস্কৃতি সংরক্ষণ: পর্যটন সাহারার স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।
চ্যালেঞ্জ
পরিবেশগত ক্ষতি: অধিক পর্যটন পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অবকাঠামোর অভাব: সাহারার অনেক পর্যটন স্থান অবকাঠামোর দিক থেকে উন্নয়নের প্রয়োজন অনুভব করে।
সাহারা মরুভূমি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সাহারার বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি, মরুদ্যান, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে আসে।
গবেষণা
সাহারা মরুভূমি বিজ্ঞানীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র। এখানকার জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ, এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করা হয়। এছাড়া, সাহারার বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন শিলাচিত্র এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা আফ্রিকার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ
সাহারা মরুভূমি বর্তমানে বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
মরুকরণ
সাহারার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মরুকরণ একটি গুরুতর সমস্যা, যা কৃষিজমি এবং মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাহারার তাপমাত্রা আরও বাড়ছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। এর ফলে এখানকার জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবনধারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাহারা মরুভূমি কেবল একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনা। এর বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতি, কঠোর পরিবেশে অভিযোজিত জীববৈচিত্র্য, এবং ঐতিহাসিক ভূমিকা এটিকে একটি অনন্য স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং মানবিক কার্যকলাপের কারণে সাহারার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মুখে। সাহারার টেকসই উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ আমাদের বৈশ্বিক দায়িত্ব।
পড়ুন: কালাহারি মরুভূমি: প্রকৃতির এক বিস্ময়কর রাজ্য ক্লিক