শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের বিচিত্র রঙ এবং ডাকাডাকি বেশ আকর্ষণীয়। শালিক চিরসবুজ ঘন বনে, লোকালয়ে, গ্রামীণ বনে বাস করে। যাদের মধ্যে কয়েক প্রজাতি সুলভ, কয়েকটি দূর্লভ এবং কয়েকটি প্রজাতি পরিযায়ী হয়ে আসে। পরিযায়ী শালিকের মধ্যে গোলাপি শালিক, চিতিপাখ তেল শালিক অন্যতম। গত কয়েক বছরে দেশে শালিকের তালিকায় তালিকায় যুক্ত হয়েছে খয়রাগাল শালিক ও বেগুনিপিঠ কাঠ শালিক। এই প্রজাতি দুটি পান্থ পরিযায়ী। পাখিরা যখন একটি দেশ থেকে অন্য কোন দেশের নির্দিষ্ট গন্তব্যর জন্য যাত্রা করে তখন পথে তৃতীয় কোন দেশে যাত্রা বিরতি দেয় তখন এসকল প্রজাতির পাখিদের পান্থ পারিযায়ী বা প্যাসেজ মাইগ্রান্ট হিসেবে গণ্য।
গোলাপি শালিক আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে মূলত শীতের সময়। তবে সংখ্যায় কম, প্রতিবছর একটি বা দুটি পাখির দেখা মিলে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে গোলাপি শালিকের মাঝে মাঝে দেখা মেলে। তাই যখনই সেখানে যায় সজাগ দৃষ্টি রাখি।
গতবছর শীতে দ্বীপের সেন্টমার্টিন দ্বীপে কৃষিজমির ওপর দিয়ে হেঁটে পাখি দেখতেছিলাম। হঠাৎ একটি পাখির দিকে চোখ পড়ে। একাকী কোথা থেকে যেন ওড়ে এসছে। শালিকের মতোই দেখতে। বায়োনোকুলার দিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি। পালকের রং হালকা গোলাপি। তরুণ গোলাপি শালিক। বয়স বাড়লে তার রঙ গাঢ় হবে। ছবি তোলার আগেই সে উড়ে গেল। প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজার পর দেখলামা আবা উড়ে এসেছে। তবে একা নয় ভাত শালিকের ঝাঁকের সঙে। যেহেতু সে একা তাই অন্য প্রাজতির দলে ভিড়েছে। তাতে তার পথ চেনা কিংম্বা খাবারের উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। দুদিন সেই শালিকটাকে পর্যবেক্ষণ করেছি। যেখানে খাবারের উচ্ছিস্ট ফেলা হয়েছে সেখানে শালিকের দল বিরতি দিয়ে দিয়ে পালা করে আসে, বিশেষ করে যখন তাদের খিদে পায়। আমি চারটি স্পট খুঁজে পেলার যেখানে শালিকগুলো প্রতিদিন আসা যাওয়া করে। গোলাপি শালিকটিও ভাত শালিকের দলের সঙ্গে আসা যাওয়া করে। তবে সে বিপদের আঁচ পেলে সবার আগে উড়াল দেয়। আবার যখন খাবার খেতে আসে তখন মাঝামাঝি সময়ে ভূমিতে নামে। দেশীয় শালিকরা নামার পর। রাত্রিযাপনও অন্য শালিকেদের সাথে করে কোন বৃক্ষের শাখায়।
গোলাপি শালিকের ইংরেজী নাম রোসি স্টারলিং, বৈজ্ঞানিক নাম Pastor roseus। ভারতীয় উপমহাদেশে শীতে পরিযায়ী হয়। ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়াতে প্রজনন করে। খাবার তালিকায় আছে পোকা-মাকড়, ফল, ফুলের মধু, উচ্ছিস্ট। বড় ঝাঁকে পরিযায়ী হয়ে আসে ভারতে। তারপর সেখান থেকে দলছুট হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে কোন বড় ঝাক কারো চোখে পড়েনি। স্ত্রী ও পুরষ পাখি দেখেতে একই রকম। কালো ও গোলাপী পালকের পাখি। আকারে ভাত শালিকের চেয়ে ছোট, প্রায় ২৩ সেমি লম্বা। ওজন ৬৪ গ্রাম।
ছবি: লেখক
সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com