শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

গোলাপি শালিক
শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের বিচিত্র রঙ এবং ডাকাডাকি বেশ আকর্ষণীয়। শালিক চিরসবুজ ঘন বনে, লোকালয়ে, গ্রামীণ বনে বাস করে। যাদের মধ্যে কয়েক প্রজাতি সুলভ, কয়েকটি দূর্লভ এবং কয়েকটি প্রজাতি পরিযায়ী হয়ে আসে। পরিযায়ী শালিকের মধ্যে গোলাপি শালিক, চিতিপাখ তেল শালিক অন্যতম। গত কয়েক বছরে দেশে শালিকের তালিকায় তালিকায় যুক্ত হয়েছে খয়রাগাল শালিক ও বেগুনিপিঠ কাঠ শালিক। এই প্রজাতি দুটি পান্থ পরিযায়ী। পাখিরা যখন একটি দেশ থেকে অন্য কোন দেশের নির্দিষ্ট গন্তব্যর জন্য যাত্রা করে তখন পথে তৃতীয় কোন দেশে যাত্রা বিরতি দেয় তখন এসকল প্রজাতির পাখিদের পান্থ পারিযায়ী বা প্যাসেজ মাইগ্রান্ট হিসেবে গণ্য।

গোলাপি শালিক আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে মূলত শীতের সময়। তবে সংখ্যায় কম, প্রতিবছর একটি বা দুটি পাখির দেখা মিলে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে গোলাপি শালিকের মাঝে মাঝে দেখা মেলে। তাই যখনই সেখানে যায় সজাগ দৃষ্টি রাখি।

গতবছর শীতে দ্বীপের সেন্টমার্টিন দ্বীপে কৃষিজমির ওপর দিয়ে হেঁটে পাখি দেখতেছিলাম। হঠাৎ একটি পাখির দিকে চোখ পড়ে। একাকী কোথা থেকে যেন ওড়ে এসছে। শালিকের মতোই দেখতে। বায়োনোকুলার দিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি। পালকের রং হালকা গোলাপি। তরুণ গোলাপি শালিক। বয়স বাড়লে তার রঙ গাঢ় হবে। ছবি তোলার আগেই সে উড়ে গেল। প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজার পর দেখলামা আবা উড়ে এসেছে। তবে একা নয় ভাত শালিকের ঝাঁকের সঙে। যেহেতু সে একা তাই অন্য প্রাজতির দলে ভিড়েছে। তাতে তার পথ চেনা কিংম্বা খাবারের উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। দুদিন সেই শালিকটাকে পর্যবেক্ষণ করেছি। যেখানে খাবারের উচ্ছিস্ট ফেলা হয়েছে সেখানে শালিকের দল বিরতি দিয়ে দিয়ে পালা করে আসে, বিশেষ করে যখন তাদের খিদে পায়। আমি চারটি স্পট খুঁজে পেলার যেখানে শালিকগুলো প্রতিদিন আসা যাওয়া করে। গোলাপি শালিকটিও ভাত শালিকের দলের সঙ্গে আসা যাওয়া করে। তবে সে বিপদের আঁচ পেলে সবার আগে উড়াল দেয়। আবার যখন খাবার খেতে আসে তখন মাঝামাঝি সময়ে ভূমিতে নামে। দেশীয় শালিকরা নামার পর। রাত্রিযাপনও অন্য শালিকেদের সাথে করে কোন বৃক্ষের শাখায়।

গোলাপি শালিকের ইংরেজী নাম রোসি স্টারলিং, বৈজ্ঞানিক নাম Pastor roseus। ভারতীয় উপমহাদেশে শীতে পরিযায়ী হয়। ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়াতে প্রজনন করে। খাবার তালিকায় আছে পোকা-মাকড়, ফল, ফুলের মধু, উচ্ছিস্ট। বড় ঝাঁকে পরিযায়ী হয়ে আসে ভারতে। তারপর সেখান থেকে দলছুট হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে কোন বড় ঝাক কারো চোখে পড়েনি। স্ত্রী ও পুরষ পাখি দেখেতে একই রকম। কালো ও গোলাপী পালকের পাখি। আকারে ভাত শালিকের চেয়ে ছোট, প্রায় ২৩ সেমি লম্বা। ওজন ৬৪ গ্রাম।

ছবি: লেখক

সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
অর্কিড
প্রকৃতি

নতুন অর্কিড পেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বন-বাদারে প্রায় ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড জন্মে (সূত্র: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড-১২)। বাংলাদেশের অর্কিডের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন একটি প্রজাতি ইউলোফিয়া অবটিউজা (Eulophia

Read More »
গোলাপি কলমি
নিবন্ধ

প্রথম দেখায় নাম দিলাম গোলাপি কলমি

পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ছোট্ট এ ভূখণ্ডে নেহাত কম নয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা জলে বীজ ভেসে আমাদের উপকূলীয় বনে এবং

Read More »
ঘুঘু পাখি
প্রাণীজগৎ

ঘুঘু পাখি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য

বাংলার প্রকৃতিতে ঘুঘু পাখি এক পরিচিত এবং প্রিয় নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia এবং এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার পরিবেশে এই পাখি তার

Read More »
হট্টিটি
প্রাণীজগৎ

হট্টিটি: প্রকৃতির এক চঞ্চল প্রহরী

হট্টিটি, বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus, আমাদের দেশের একটি পরিচিত এবং চঞ্চল পাখি। এটি “Red-Wattled Lapwing” নামেও পরিচিত। এর দেহের আকৃতি, স্বতন্ত্র ডানা, এবং বিশেষভাবে চোখে

Read More »
কোমোডো ড্রাগন
প্রাণীজগৎ

কোমোডো ড্রাগন: বিশ্বের বৃহত্তম গিরগিটি

কোমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গিরগিটি। এরা ভ্যারানিডি (Varanidae) পরিবারভুক্ত এবং বৈজ্ঞানিক নাম “Varanus komodoensis”। দৈত্যাকার আকৃতি, শিকার ধরার ক্ষমতা এবং

Read More »
মেরু ভালুক
প্রাণীজগৎ

মেরু ভালুক: আর্টিকের রাজকীয় শিকারি

পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ শিকারি মেরু ভালুক সবচেয়ে শক্তিশালী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম `Ursus maritimus’, যার অর্থ “সমুদ্রের ভালুক”। বরফে আচ্ছাদিত আর্টিক অঞ্চলে

Read More »