শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

জীবনানন্দের পাখি : এক ঝাঁক দাঁড়কাক

দাঁড়কাক

‘পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে নাকো আর;
রয়েছে অনেক কাক এ-উঠানে তবু সেই ক্লান্ত দাঁড়কাক
নাই আর; অনেক বছর আগে আমে জামে হৃষ্ট এক ঝাঁক
দাঁড়কাক দেখা যেত দিন রাত-সে আমার ছেলেবেলাকার
কবেকার কথা সব; আসিবে না পৃথিবীতে সেদিন আবার:’
– রূপসী বাংলা

জীবনানন্দ দাশের কবিতা প্রকৃতির গভীরতর ছোঁয়া মিশানো। তিনি পাখিদের কবি। কবি জীবনানন্দকে পাখপাখালি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর কবিতায় ৭৭ প্রজাতির পাখির নাম পাওয়া যায়, যারা দুই বাংলায় এক বা একাধিক আঞ্চলিক নামে পরিচিত। তাঁর কবিতায় দুই প্রজাতির কাকের কথা ও বর্ণনা পাওয়া যায়। পাতি কাক ও দাঁড়কাক।

তিনি দাঁড়কাক কে দেখেছেন পথহারা পাখি হিসেবে, যেমন – ‘যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধ্যান,/ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে; এইখানে ধুন্দুল লতাতে’। আবার বলেছেন এ পাখি একা একা রাত জাগে তখন পৃথিবীর অন্য কোন পাখি আর জেগে নেই, যেমন রূপসী বাংলায়-‘ তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসেনি শাখায়;/পৃথিবীও নাই আর; দাঁড়কাক একা একা সারারত জাগে;/‘কি বা, হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার।’

সন্ধ্যাবেলায় যে যার ঘরে ফিরে আসে আপনজনের ডাকে। কবি দেখেছেন সাঁেঝরবেলায় দাঁড়কাকও ফিরে আসে তার বাসায় মুখে দুটি খড় নিয়ে। যেমন-

জানি নাকো:- আমি এই বাংলার পাড়াগাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর:
সন্ধ্যায় যে দাঁড়কাক উড়ে যায় তালবনে- মুখে দু’টো খড়

একসময় গ্রামবাংলায় প্রচুর পরিমাণে দাঁড়কাক দেখা যেত। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। পাখির এ কমে যাওয়া কবির মনে বিষণ্নতা এনে দিয়েছে। এরকম অসংখ্য উপমায় কবি দাঁড়কাককে তুলে ধরেছেন তাঁর কবিতায়।

দাঁড়কাক কালো ও নীলচে আভা মিশানো পালকের পাখি। ঠোঁট বড় এবং শক্ত। চোখ বাদামি। দাঁড়কাক গ্রামের বেশি দেখা যায়। প্রতি গ্রামেই কয়েক জোড়া দাঁড়কাক থাকে। মাঝে মাঝে তারা খাবারের উৎস পেলে সমবেত হয়। দাঁড় কাক শহড়ে কম দেখা যায়। সব বিভাগের বনেও দেখা যায়।

দাঁড়কাক বাংলাদেশে সুলভ আবসিক পাখি। সচরাচর বৃক্ষবহুল বন, বনের ধারে, ফলবাগান, লোকালয়ে ও ভাগাড়ে বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় অথবা ছোট দলে থাকে। সব ধরণের পরিবেশ থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এরা সর্বভূক তবে খাদ্য তালিকায় রয়েছে পাকা ফল, পোকমাকড়, উচ্ছিষ্ট, মৃতদেহ, পচা মাংস ইত্যাদি।

দাঁড়কাক সাহসী ও কৌতুহলী পাখি। মানুষ দেখলে বিচলিত হয়না। গৃহপালিত হাঁস-মুরগীর ছানা ধরতে এরা নানান কৌশল অবলম্বন করে। ছেলেবেলায় আমরা মাথায় দাঁড়কাকের ঠোকর খেয়েছি। এরা উঠানে সেদ্ধ ধান খেতে আসে। মাঝে মাঝে গভীর শব্দে ডাকে- ক্রা..ক্রা..। নভেম্বর-এপ্রিল মাসে বনের ধারের বড় গাছে শুকনো ডাল,কাঠি, পাতা, নারিকেলের ছোবরা, পশম ইত্যাদি দিয়ে মাচার মতো বাসা বানয়। বাসা ৩-৫ টি ডিম পাড়ে। ডিম ফেটে ১৭-১৯ দিনে। কাকছানার বাসা ছারে চার সপ্তাহে।

সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
অর্কিড
প্রকৃতি

নতুন অর্কিড পেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বন-বাদারে প্রায় ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড জন্মে (সূত্র: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড-১২)। বাংলাদেশের অর্কিডের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন একটি প্রজাতি ইউলোফিয়া অবটিউজা (Eulophia

Read More »
গোলাপি শালিক
নিবন্ধ

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের

Read More »
গোলাপি কলমি
নিবন্ধ

প্রথম দেখায় নাম দিলাম গোলাপি কলমি

পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ছোট্ট এ ভূখণ্ডে নেহাত কম নয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা জলে বীজ ভেসে আমাদের উপকূলীয় বনে এবং

Read More »
ঘুঘু পাখি
প্রাণীজগৎ

ঘুঘু পাখি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য

বাংলার প্রকৃতিতে ঘুঘু পাখি এক পরিচিত এবং প্রিয় নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia এবং এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার পরিবেশে এই পাখি তার

Read More »
হট্টিটি
প্রাণীজগৎ

হট্টিটি: প্রকৃতির এক চঞ্চল প্রহরী

হট্টিটি, বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus, আমাদের দেশের একটি পরিচিত এবং চঞ্চল পাখি। এটি “Red-Wattled Lapwing” নামেও পরিচিত। এর দেহের আকৃতি, স্বতন্ত্র ডানা, এবং বিশেষভাবে চোখে

Read More »
কোমোডো ড্রাগন
প্রাণীজগৎ

কোমোডো ড্রাগন: বিশ্বের বৃহত্তম গিরগিটি

কোমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গিরগিটি। এরা ভ্যারানিডি (Varanidae) পরিবারভুক্ত এবং বৈজ্ঞানিক নাম “Varanus komodoensis”। দৈত্যাকার আকৃতি, শিকার ধরার ক্ষমতা এবং

Read More »
মেরু ভালুক
প্রাণীজগৎ

মেরু ভালুক: আর্টিকের রাজকীয় শিকারি

পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ শিকারি মেরু ভালুক সবচেয়ে শক্তিশালী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম `Ursus maritimus’, যার অর্থ “সমুদ্রের ভালুক”। বরফে আচ্ছাদিত আর্টিক অঞ্চলে

Read More »