বাংলাদেশের বন-বাদারে প্রায় ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড জন্মে (সূত্র: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড-১২)। বাংলাদেশের অর্কিডের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন একটি প্রজাতি ইউলোফিয়া অবটিউজা (Eulophia obtusa) । রাজশাহী এলাকার একটি প্রাকৃতিক ঘাসবনে এ প্রজাতির অর্কিডর ফুলের দেখা পাওয়া যায় ২০০৮ সালে। কিন্তু প্রজাতিটি কোন উদ্ভিদ গবেষকের দৃষ্টিগোচর না হওয়ার কারণে সনাক্ত করা হয়নি। ২০১৪ সালের জুন মাসে সে অর্কিডের খোঁজে রাজশাহী গিয়ে প্রায় ২০ উদ্ভিদে অর্কিডে ফুল দেখতে পাই।
বাংলাদেশে নতুন এ প্রজাতিটি নিয়ে আমার একটি গবেষনাপত্র স্প্রিঙ্গার জার্নালের অর্ন্তভুক্ত কিউ বুলেটিনের জুন ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। কিউ হার্বেরিয়ামে ১৯০২ সালে ভারত থেকে সংগৃহিত নমুনা, প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত গবেষনাপত্র বিশ্লেষন এবং একটি আঁকা ছবি প্রজাতিটি সনাক্ত করেতে বিশেষ অবদান রাখে। গত ১০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্রাকৃতিক আবাসে এ প্রজাতিটি দেখা যায়নি এবং কোন ছবিও তোলা সম্ভব হয়নি। যে কারনে প্রজাতিটিকে অতি দূর্লভ হিসেবে গন্য করা হচ্ছে।
এ অর্কিড প্রজাতি সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানা ছিলনা। ১৮৩৩ সালে ভারতের উত্তরকান্দ থেকে প্রথম এটির বর্ননা পাওয়া যায়। ১৯০২ সালে গঙ্গার অববাহিকার এটি পাওয়া গিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে আঠার শতকের দিকে পাওয়া গিয়েছিল এমন তথ্য আছে। বাংলাদেশে এটির উপস্থিতির কোন তথ্য ও প্রকাশনাও নেই। ২০১৩ সালে আসামের চিরাং রিজার্ভ ফরেস্ট এবং নেপাল থেকে পাওয়া গেছে বলে তথ্যা রয়েছে, তবে এটির কোন নমুনা ও ছবি গবেষকরা দেখাতে সক্ষম হননি।
প্রকাশনা পত্রটিতে বাংলাদেশে নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিটিকে মহাবিপন্ন উদ্ভিদ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে আই ইউ সি এন’র প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া ঝুঁকির তালিকা (রেডলিস্ট) নির্ণয়ের নিয়ম অনুসারে। বাংলাদেশে আবিস্কৃত এ অর্কিড প্রজাতিটি মারাত্বক বিলুপ্তি হয়ার ঝুকিতে রয়েছে বলা হয়েছে জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে।
বাংলাদেশে যেখানে এ উদ্ভিদটি জন্মে সে জমিটি অনেক কাল ধারেই ঘাস ভূমি ছিল। শুধুমাত্র শীতের সময় খড় কাটা হতো। বর্ষা আসলেই ঘাসের সাথে অর্কিড চারা গজিয়ে বড় হতো এবং ফুল ফুটত। গ্রামের মানুষ ঘাসবনে এ সুন্দর ফুলের গুরুত্ব হয়তো কোনদিন বুঝতেই পারেননি। পাতা অবিকল ঘাসের মতো। তাঁদের কাছে হয়তো এটি ঘাসফুল নামেই পরিচিত ছিল। ২০১৫ সালে স্থানীয় এক কৃষক মালিকের কাছ থেকে জমিটুকো ঠিকা নিয়ে সবজি চাষের পরিকল্পনা করেন। সে বছর প্রায় ৭-১০ কেজি কন্দ বা বিছন ধ্বংশ হয়ে যায় লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের ফলে এবং কিছু বিছন জমির চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সে বছর জমি চাষ করার পরও সবজি চারা মধ্যেও কিছু চারা গজিয়েছিল বেঁচে যাওয়া বিছন থেকে। কিন্তু ফুল ধরেনি।
মাত্র ০.৮ হেক্টর যায়গার ভিতরে এটি জন্মে এবং তিনদিকেই কৃষিজমি ও চাষাবাদ। ২০১৫ সালে থেকে ধ্বংস করা ঘাসবনটি পূর্বেও রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় কৃষকের মাধ্যমে কাজ শুরু করি এবং ফসল চাষ বন্ধ করা হয়।
সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com