শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

প্যারটফিশের মল সমুদ্রসৈকতের সাদা বালির গোপন উপাদান

প্যারটফিশের মল
তপ্ত রোদে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে ভরা একটি সাদা বালুর সৈকতে হাঁটার অনুভূতি অনন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সুন্দর সাদা বালির পেছনে আছে প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য কারিগরের কাজ— প্যারটফিশ। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। এই বালি মূলত প্যারটফিশের মল থেকে তৈরি।

প্যারটফিশের মল: প্যারটফিশ, তাদের উজ্জ্বল রঙ এবং পাখির ঠোঁটের মতো আকৃতির দাঁতের জন্য পরিচিত। প্রায় ৯০টি প্রজাতির এই মাছগুলি বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় অগভীর পানিতে বাস করে এবং প্রবাল প্রাচীরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে। এই মাছগুলোর প্রিয় খাবার হলো প্রবালের অ্যালগি-আচ্ছাদিত স্তর, যেটি খাওয়ার সময় তারা প্রবালের শক্ত কঙ্কালের ছোট ছোট টুকরোও গিলে ফেলে।

প্যারটফিশের শরীরে থাকে বিশেষ ধরণের একটি চোয়াল, যা তাদের মুখের পেছনে অবস্থিত এবং গিলে ফেলা প্রবালের টুকরোগুলোকে আরও ক্ষুদ্র করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করে এবং অবশিষ্টাংশ, অর্থাৎ বালু, শরীর থেকে নির্গত করে।

প্যারটফিশের দাঁত তাদের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাদের দাঁতগুলি শক্ত প্রবালের কঙ্কাল কেটে খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এই দাঁতের সাহায্যে তারা প্রবালের উপর জমে থাকা অ্যালগি এবং ক্ষুদ্র খাদ্য খেয়ে থাকে।

একটি পূর্ণবয়স্ক প্যারটফিশ বছরে প্রায় ১ টনের বেশি বালু উৎপাদন করতে সক্ষম। এই বিশাল পরিমাণ বালু সময়ের সঙ্গে জমা হয়ে সাদা বালুর স্তর তৈরি করে, যা পরবর্তীতে সমুদ্রস্রোত এবং ঢেউয়ের মাধ্যমে দ্বীপের ভূমি তৈরিতে অবদান রাখে।

প্যারটফিশের এই বালু তৈরির প্রক্রিয়া কেবল সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং দ্বীপ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া তারা প্রবালের উপর জমে থাকা ক্ষতিকারক অ্যালগি পরিষ্কার করে, যা প্রবাল প্রাচীরের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

পরের বার যখন কোনো সাদা বালুর সৈকতে হাঁটবেন, তখন হয়তো প্যারটফিশের অবদান মনে পড়বে। প্রকৃতির এই রঙিন শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সময়, মনে রাখুন তাদের কারণেই আমরা উপভোগ করতে পারি এই অপূর্ব সাদা বালুর সৈকত।

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
পেঙ্গুইন
প্রাণীজগৎ

পেঙ্গুইন এর কি হাঁটু থাকে?

পেঙ্গুইন আমাদের কাছে আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রাণী হিসেবে পরিচিত। তাদের অদ্ভুত হাঁটার ধরণ এবং পরিবেশের সঙ্গে তাদের অদ্ভুত মিল তাদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

Read More »
বুনো মান্দার
নিবন্ধ

ফুলেভরা বুনো মান্দার

মাঝে মাঝে নির্জন কোন সবুজ বনের পথ দিয়ে হেঁটে চলার সময় দেখা হয়ে যায় হলুদ কিম্বা লাল রঙের ফুলেভরা কোন বৃক্ষের সঙ্গে। বনতল থেকে উপরের

Read More »
অর্কিড
প্রকৃতি

নতুন অর্কিড পেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বন-বাদারে প্রায় ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড জন্মে (সূত্র: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড-১২)। বাংলাদেশের অর্কিডের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন একটি প্রজাতি ইউলোফিয়া অবটিউজা (Eulophia

Read More »
গোলাপি শালিক
নিবন্ধ

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের

Read More »
গোলাপি কলমি
নিবন্ধ

প্রথম দেখায় নাম দিলাম গোলাপি কলমি

পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ছোট্ট এ ভূখণ্ডে নেহাত কম নয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা জলে বীজ ভেসে আমাদের উপকূলীয় বনে এবং

Read More »
মৌলের
বিজ্ঞান

পৃথিবীতে কোন মৌলের প্রাচুর্যতা সবচেয়ে বেশি?

পৃথিবী বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রাকৃতিকভাবে বা মানুষের দ্বারা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে পর্যায় সারণিতে ১১৮টি মৌল শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯২টি মৌল

Read More »
ঘুঘু পাখি
প্রাণীজগৎ

ঘুঘু পাখি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য

বাংলার প্রকৃতিতে ঘুঘু পাখি এক পরিচিত এবং প্রিয় নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Streptopelia এবং এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার পরিবেশে এই পাখি তার

Read More »
হট্টিটি
প্রাণীজগৎ

হট্টিটি: প্রকৃতির এক চঞ্চল প্রহরী

হট্টিটি, বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus indicus, আমাদের দেশের একটি পরিচিত এবং চঞ্চল পাখি। এটি “Red-Wattled Lapwing” নামেও পরিচিত। এর দেহের আকৃতি, স্বতন্ত্র ডানা, এবং বিশেষভাবে চোখে

Read More »
কোমোডো ড্রাগন
প্রাণীজগৎ

কোমোডো ড্রাগন: বিশ্বের বৃহত্তম গিরগিটি

কোমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গিরগিটি। এরা ভ্যারানিডি (Varanidae) পরিবারভুক্ত এবং বৈজ্ঞানিক নাম “Varanus komodoensis”। দৈত্যাকার আকৃতি, শিকার ধরার ক্ষমতা এবং

Read More »