ব্রিটিশ জ্বালানি কোম্পানি বিপি (BP) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবে। এই কৌশলগত পরিবর্তনটি এসেছে কিছু বিনিয়োগকারীর চাপের পর, যারা কোম্পানির লাভ ও শেয়ার মূল্যের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম হওয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
বিপি’র বক্তব্য
বিপি জানিয়েছে, তারা তেল ও গ্যাসে বিনিয়োগ প্রায় ২০ ভাগ বৃদ্ধি করে বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করবে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পূর্বে পরিকল্পিত বিনিয়োগ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি কমানো হবে। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মারে অকিনক্লস স্বীকার করেছেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তারা ‘অতিরিক্ত দ্রুত’ এগিয়েছিল এবং গ্রিন এনার্জিতে তাদের বিশ্বাস ছিল ‘ভুলভাবে স্থাপিত’।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিপি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কাজ করা ব্যবসাগুলিতে ‘খুব নির্বাচনীভাবে’ বিনিয়োগ করবে, যার জন্য ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি ডলার প্রতি বছর বরাদ্দ করা হবে।
বিপি’র চেয়ারম্যান হেলগে লুন্ড জানান, কোম্পানির নতুন দিকনির্দেশনার মূল বিষয় হবে ‘নগদ প্রবাহ বৃদ্ধির’ দিকে মনোযোগ দেওয়া।
কোম্পানির শেয়ারগুলি মঙ্গলবারের ঘোষণা আগের দিন বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে পরে তা কমে গেছে।
বিপি তেল ও গ্যাস উৎপাদনে মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে লাভ বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রাখছে, যেটি কোভিড মহামারির পর নিম্নমুখী দামের পরবর্তীতে লাভের বৃদ্ধি দেখেছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ২.৩ মিলিয়ন থেকে ২.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, এবং ২০২৭ সালের শেষের মধ্যে ‘বিশাল’ তেল ও গ্যাস প্রকল্প শুরু করার আশা করছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রশ্ন
এই পদক্ষেপটি এমন সময়ে এসেছে যখন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি শেল এবং নরওয়ের ইকুইনরও সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা কমিয়েছে, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ড্রিল বেবি ড্রিল’ মন্তব্যগুলি জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছে।
বিপি’র এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের পূর্বের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে গেছে, যা পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলির সমালোচনার মুখে পড়েছে। গ্রিনপিস যুক্তরাজ্য বলেছে যে, এই পদক্ষেপটি প্রমাণ করে যে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলি জলবায়ু সংকট সমাধানে অংশ হতে পারে না বা হতে চায় না।
বিপি’র এই কৌশলগত পরিবর্তনটি কোম্পানির ভবিষ্যত এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝোঁক বাড়ছে।
সূত্র: বিবিসি