পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ছোট্ট এ ভূখণ্ডে নেহাত কম নয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা জলে বীজ ভেসে আমাদের উপকূলীয় বনে এবং দ্বীপ এলাকায় অনেক প্রজাতির গাছপালার বিস্তার ঘটেছে। তবে জানামতে বাংলাদেশের দ্বীপ এলাকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য কোন সঠিক উদ্ভিদ জরিপ হয়নি। দেশের বনে-বাঁদারে, পথপাশে, গ্রামীণ ঝোপে অনেক প্রজাতির বুনো কলমিলতা দেখা যায়। এসব কলমিলতার ফুল দেখেতে খুবই আকর্ষণীয় এবং নানান রঙে বর্ণিল।
দেশের নানান প্রান্তে ঘুরে বহু প্রজাতির কলমি ফুলের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে এবং তার মধ্যে একটি প্রজাতি পেয়েছিলাম যেটি বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রজাতি ছিল। বহুদিন ধরে এক প্রজাতির কলমি লতাকে খুঁজতে ছিলাম। পুস্তক তথ্যমতে এটি দেশের উপকূল অঞ্চলে জন্মে। বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, বাঘেরহাঁট, নোয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, সুন্দরবন, সোনাদিয়া দ্বীপ সহ নানান প্রান্তে বহুবছর খুঁজে সেই কলমি লতার দেখা পাইনি। কলমি লতায় ফুল না ফুটলে তাদের প্রজাতি সনাক্ত করা কঠিন, কারণ পাতার গঠনশৈলি একই রকম অনেকগুলি প্রজাতির ক্ষেত্রে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে উদ্ভিদ ও পাখির খোঁজে বের হয়েছি শীতের সকালে। প্রধান উদ্দেশ্য গোলাপি শালিক এবং বুনোফুল। শীতের সময় গোলাপি শালিক আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে বিশেষ করে উপকূলীয় এলকায়। সেই দিন একটি গোলাপি শালিকের প্রথম দেখা পেয়েছিলাম। তবে গোলাপি রঙের যে অদেখা কলমি ফুলের দেখা পেয়ে যাবো সেটা ভাবেনি। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর পাড়ার একটি বাড়ির কাছে পতিত অংশে লতার ঝোপ। মাঝারি লতাময় ঝোপের লতায় ফুটে আছে অসংখ্য কলমি ফুল। একটি ছড়ায় অনেক কলি। কেয়া গাছে লতাগুলি বেয়ে ওঠে মাঝারি ঝোপ তৈরি করেছে। হ্যাঁ, এটিই সেই কলমি লতা যাকে অনেকদিন ধরে খুঁজেছি! কিছু ভালো ছবি নিলাম। পাতা গোলাকার, চিরসবুজ। এ লতাটিকে দ্বীপের আরো কয়েকটি জায়গাতে দেখেছি। পথের পাশেও জন্মেছে। এ দ্বীপে আরো কিছু প্রজাতির কলমি লতা পেয়েছি তবে সাগর কলমি এই কলমি ফুল সবচেয়ে সুন্দর। সকালের রোদের আলোয় পথিকের নজর কেড়ে নেয় এ কলমি ফুল। পিঁপড়া, পোক-মাকড় ও মধুপায়ী পাখির সমাগম হয় ফুলে ফুলে।
সুন্দর এ কলমি ফুল উদ্ভিদের কোন বাংলা নাম নেই। তাই নাম দিয়েছি গোলাপি কলমি। ফুলের রঙের সাথে নামটি মানানসই। তবে আমাদের দেশে আরও যে সকল গোলাপি রঙের কলমি আছে সে সকল প্রজাতির বাংলা নাম আছে। এ কলমি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Stictocardia campanulata। লতা ঝার আকারে বেড়ে ওঠে। ধারক পেলে অনেক উঁচুতে ওঠে। তবে পথের পাশে অন্যান্য গুল্ম উদ্ভিদে বেয়ে ওঠে। ফুল অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে। এ দ্বীপ এখন পর্যটকদের দখলে। অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত পর্যটন দ্বীপটির জৈববৈচিত্র্যর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িছে। সমুদ্রের অপার নীলজল, প্রবাল, পাখিসব ও বনফুল নিয়ে এ দ্বীপ যেন টিকে থাকে সেই কামনায়।
সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com