শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

ফুলেভরা বুনো মান্দার

বুনো মান্দার
মাঝে মাঝে নির্জন কোন সবুজ বনের পথ দিয়ে হেঁটে চলার সময় দেখা হয়ে যায় হলুদ কিম্বা লাল রঙের ফুলেভরা কোন বৃক্ষের সঙ্গে। বনতল থেকে উপরের দিকে তাঁকালে ডালপালাসহ ফুলের বিন্যাস অপূর্ব লাগে। মনকে আবিষ্ট করে তোলে সেই রূপধারা। সাদা কিংম্বা নীল আলোর আকাশের নীচে বেড়ে ওঠা বনে এরকম অনেক বৃক্ষ রয়েছে যাদের ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে মানুষের মনকে। হবিগঞ্জের সাতছড়ি অরণ্যতে দু’বার এরকম দুটি প্রজাতির বৃক্ষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ফুলের রঙ এবং গাছভরা ফুলের বিন্যাসে ছুঁয়ে গেছে মন। তাদের একটি বনচালতা, সে বনে নিজকে মেলে ধরে হলুদ রঙের ঝর্ণাধারায়। অন্যটি বুনো মান্দার, সে শাখায় শাখায় গাঢ় লাল বর্ণের ফুল নিয়ে জেগে ওঠে বনের মাঝে। অবিরাম ভাবে ফুটতে থাকে ফুল, প্রায় দু’মাস থাকে তার ক্রমাগত প্রস্ফুটন।

সাতছড়ি অরণ্যর সকল মধুপায়ী পাখিরা তখন বনের বুনো মান্দার গাছে দিনভর সময় কাটায়। ভোরের আলোর আভা পুরোপুরিভাবে ফোটার অনেকটা আগেই পাখিরা চলে আসে গাছটিতে। ফুলের মধ্যে বসবাস করা পোকামাঁকড় খেতে আসে নানা প্রজাতির পতঙ্গভোগী পাখি। টিয়া প্রজাতিরা আসে ফুলের কুঁড়ি ও পুষ্প খেতে। প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখির উপস্থিতি দেখা গেছে এ মান্দার গাছে যখন ফুল ফোটে। তাছাড়াও অনেক পাখি যারা পান্থ পরিযায়ী তারও চলার পথে এ মান্দার গাছে সময় কাটিয়ে যায়। খাবার খায়, এমনকি কিছুদিন থাকেও। এরকম পাখি প্রজাতি প্রতি বছর ফুলের মৌসুমে দেখা যাচ্ছে সাতছড়ির মান্দার গাছে গত কয়েক বছর ধরে।

বনবিভাগ সাতছড়ি বনের মধ্যে পর্যটকদের জন্য একটি টাওয়ার নির্মাণ করার পর এত প্রজাতির পাখির আনাগোনা হয় এই গাছে সেটি জানা গেছে। কারণ গাছটি টাওয়ারের নিকটে। কাছকাছি আরও একটি গাছ আছে। বনতল থেকে উঁচু গাছের শাখায় বসা পাখির দেখা পাওয়া ও গোনা মুসকিল। টাওয়ার থেকে পুরো গাছটির সকল ডালাপালা দেখা যায় এবং ছবি তোলার জন্যও কার্যকারী। বনে যদি এরকম গাছ থাকে তাহলে পাখি ও পাখি গবেষকদের জন্য উপকার হয়।

বুনোমান্দার পাহাড়ী বন, গ্রামের ঝোপ-ঝাড়ে, আবাদী জমির আশে পাশে জন্মে। আমাদের পাহাড়ী বনে ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে। বিশেষ করে বনের একটু খোলা প্রান্তরে। পাহাড়ী নদী ও পাহাড়ী ছড়ার আশেপাশেও দেখা যায়। সমতলে এটির প্রাপ্তি কম। ঝোপ-ঝাড় বিনাসের ফলে কমে গেছে। এটি একটি পাখি বান্ধব গাছ। শত শত বুনো পাখি খাবারের জন্য এ গাছের উপর নির্ভরশীল। বনবাসী মেটেটুপি ছোট কাঠকুড়ালির খাবার উপযোগী এক প্রকার শুয়াপোকা এ গাছের কান্ডে বসবাস করে। এ পাখির বাসায় ডিম ফুটে ছানা হলে মেটেটুপি ছোট কাঠকুড়ালি ছানাদের জন্য খাবারের একটি বড় অংশ এ গাছের কান্ড থেকে সংগ্রহ করে।

বুনো মান্দার (Erythrina variegata) মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। প্রায় ২৭ মিটার লম্বা হয়। কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা কাঁটা দ্বারা বর্মকৃত। পাতা ত্রিফলাযুক্ত। শীতে পাতা ঝরে যায়। বসন্তে ফুলের আগমন হয়। পুষ্প রেসিম, শাখার শীর্ষে জন্মায়। মঞ্জরিপত্র ত্রিকোণাকার। পাপড়ি উজ্জ্বল লাল, চওড়া এবং অসম। পুংকেশর লম্বা। ফল নলাকার, ১২-১৫ সেমি লম্বা, মাঝে খাঁজ থাকে। কাঠ নরম, যে কারণে সাধারণত জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। পাতা ও বাকলে ঔষধীগুন রয়েছে। ইংরেজী নাম ইন্ডিয়ান কোড়াল ট্রি। ভারতীয় উপমহাদেশের বন্য প্রজাতি। পৃথিবীর নানা দেশে শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে লাগানো হয়েছে। মাটির উর্বরতা বাড়ানো জন্য এ গাছটি উপকারী।

লেখক-
সৌরভ মাহমুদ
প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
nature.sourav@gmail.com

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড
ভূগোল

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড: জীববৈচিত্র্যের এক অমূল্য রত্ন

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড মেরিন সংরক্ষিত এলাকা (Swatch of No Ground Marine Protected Area) বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের একটি গভীর খাদ বা সাগরবদ্ধ এলাকা, যা ২০১৪ সালের

Read More »
জলবায়ু পরিবর্তন
ঝুঁকি

বৈশ্বিক সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ হবে কী?

জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী পরিবেশ, প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন মূলত পৃথিবীর সাধারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি,

Read More »
সমুদ্র ফেনা
প্রকৃতি

সমুদ্র ফেনা: একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়

সমুদ্র ফেনা সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে দেখা যায়। এটি সমুদ্রের পানির উপরের স্তরে তৈরি হওয়া এক ধরনের ফেনিল স্তর। যখন সমুদ্রের পানিতে দ্রবীভূত জৈব উপাদান, যেমন

Read More »
প্যারটফিশের মল
প্রাণীজগৎ

প্যারটফিশের মল সমুদ্রসৈকতের সাদা বালির গোপন উপাদান

তপ্ত রোদে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে ভরা একটি সাদা বালুর সৈকতে হাঁটার অনুভূতি অনন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সুন্দর সাদা বালির পেছনে আছে প্রকৃতির এক

Read More »
অর্কিড
প্রকৃতি

নতুন অর্কিড পেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বন-বাদারে প্রায় ১৭৮ প্রজাতির অর্কিড জন্মে (সূত্র: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, খণ্ড-১২)। বাংলাদেশের অর্কিডের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন একটি প্রজাতি ইউলোফিয়া অবটিউজা (Eulophia

Read More »
গোলাপি শালিক
নিবন্ধ

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের

Read More »
গোলাপি কলমি
নিবন্ধ

প্রথম দেখায় নাম দিলাম গোলাপি কলমি

পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় অংশে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ছোট্ট এ ভূখণ্ডে নেহাত কম নয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা জলে বীজ ভেসে আমাদের উপকূলীয় বনে এবং

Read More »
মৌলের
বিজ্ঞান

পৃথিবীতে কোন মৌলের প্রাচুর্যতা সবচেয়ে বেশি?

পৃথিবী বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রাকৃতিকভাবে বা মানুষের দ্বারা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে পর্যায় সারণিতে ১১৮টি মৌল শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯২টি মৌল

Read More »