বাজাউ জনগোষ্ঠী, যাদের সমুদ্র যাযাবর বা সি জিপসি নামেও ডাকা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামুদ্রিক অঞ্চলে বসবাসরত একটি অস্ট্রোনেশীয় জাতিগোষ্ঠী। তারা প্রধানত ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে।
জনসংখ্যা: বাজাউ জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ মিলিয়ন। এর মধ্যে ফিলিপাইনে প্রায় ৪,৯৯,৬২০, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪,৫৬,৬৭২, ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২,৩৫,০০০ এবং ব্রুনেইয়ে প্রায় ১২,০০০ জন বসবাস করে।
ইতিহাস ও উৎপত্তি: বাজাউদের সঠিক উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধারণা করা হয় যে, তারা জাম্পোয়াঙ্গা উপদ্বীপ থেকে উৎপন্ন হয়ে ১০ম শতাব্দীতে বাসিলান, সুলু, বোর্নিও এবং সুলাওয়েসি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সামুদ্রিক যাযাবর জীবনধারা প্রায় ১,০০০ বছরের পুরনো।
জীবনধারা: বাজাউরা ঐতিহ্যগতভাবে সমুদ্রে বসবাস করে, ছোট কাঠের নৌকা ব্যবহার করে মাছ ধরা এবং সামুদ্রিক শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা সমুদ্রে জন্মগ্রহণ করে এবং সমুদ্রে মৃত্যুবরণ করে। তবে মুসলিম হওয়ায়, তারা মৃতদেহ মূল ভূখণ্ডে ইসলামী রীতিতে দাফন করে।
ভাষা: বাজাউ জনগোষ্ঠী সামা-বাজাউ ভাষায় কথা বলে, যা অস্ট্রোনেশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এছাড়া তারা দুসুন, তাউসুগ, চাভাকানো, সেবুয়ানো, ফিলিপিনো, মালয়, ইংরেজি এবং ইন্দোনেশীয় ভাষাও ব্যবহার করে।
ধর্ম ও সংস্কৃতি: বাজাউরা প্রধানত সুন্নি মুসলিম। তাদের সংস্কৃতিতে সমুদ্রের প্রতি গভীর সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। তারা বিভিন্ন সামুদ্রিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে এবং তাদের জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত।
উৎসব ও অনুষ্ঠান: বাজাউদের মধ্যে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান পালিত হয়, যা তাদের সামুদ্রিক জীবনধারার প্রতিফলন। তারা নাচ, গান এবং নৌকা দৌড়ের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি উদযাপন করে।
দাফন প্রথা: যদিও বাজাউরা সমুদ্রে জীবনযাপন করে, তারা মৃতদেহ মূল ভূখণ্ডে ইসলামী রীতিতে দাফন করে। দাফন প্রক্রিয়ায় মৃতদেহ ধোয়া থেকে শুরু করে সমাধিস্থ করা পর্যন্ত সমস্ত ইসলামী রীতি পালন করা হয়।
সংস্কৃতি: বাজাউদের সংস্কৃতি সমুদ্রকেন্দ্রিক। তাদের নৌকা, যা “লেপা” নামে পরিচিত, তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। তারা নৌকায় বসবাস করে, যা তাদের বাড়ি, কর্মস্থল এবং পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাজাউ জনগোষ্ঠী তাদের সমুদ্রকেন্দ্রিক জীবনধারা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। তাদের জীবনধারা এবং সংস্কৃতি সমুদ্রের সাথে গভীরভাবে জড়িত, যা তাদেরকে “সমুদ্র যাযাবর” নামে পরিচিত করেছে।