শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫

উলি মাউস: প্রকৃতিতে ম্যামথ ফিরে আসার সম্ভাবনা?

উলি মাউস

একটি ডি-এক্সটিঙ্কশন (বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার) কোম্পানি কোলসাল (Colossal) ম্যামথ এবং ইঁদুরের জিনগত পরিবর্তন একত্রিত করে একটি লোমশ ইঁদুর তৈরি করেছে।

মাউসের শরীরে ম্যামথের জিন পরিবর্তন

বিলুপ্ত উলি ম্যামথ (Mammuthus primigenius) এবং মাউসের লোম বৃদ্ধি সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলোর সংমিশ্রণে কোলসাল তাদের নতুন জিন-সম্পাদিত ‘উলি মাউস’ তৈরি করেছে। ৪ মার্চ কোম্পানিটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও গবেষণা প্রাক-প্রকাশন (preprint) পেপারে এই তথ্য জানিয়েছে।

ডালাস, টেক্সাস-ভিত্তিক কোলসালের বাজারমূল্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। কোম্পানিটি বলছে, এই উলি মাউস প্রকল্পটি তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তাদের উদ্দেশ্য হলো এশীয় হাতির মধ্যে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা, কারণ হাতি ম্যামথের সবচেয়ে কাছের জীবিত আত্মীয়।

কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বেন ল্যাম এক বিবৃতিতে বলেন, “কোলসাল উলি মাউস আমাদের ডি-এক্সটিংকশন মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।”

বিজ্ঞানীদের সন্দেহ: সত্যিই কি এটি বড় অর্জন?

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই গবেষণা ম্যামথ পুনরুদ্ধারের জন্য বড় কোনো অগ্রগতি নয়। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপোলজির (জার্মানি) জিন প্রকৌশলী স্টিফান রিজেনবার্গ বলেন, “এটি ম্যামথ তৈরি করা থেকে অনেক দূরে। এটি শুধু একটি ইঁদুর, যার কিছু বিশেষ জিন পরিবর্তিত হয়েছে।”

লম্বা লোমের রহস্য

কোলসাল এবং তাদের সহযোগীরা গবেষণা করছেন কোন জিনগুলো ম্যামথদের শীত সহনশীলতা, মোটা লোম ও অতিরিক্ত চর্বি জমার বৈশিষ্ট্য গঠনে ভূমিকা রেখেছে। গবেষকরা বিলুপ্ত ম্যামথদের নমুনা এবং তাদের জীবিত ও বিলুপ্ত আত্মীয়দের ডিএনএ তুলনা করে এই পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।

এই গবেষণার অংশ হিসেবে, কোলসালের প্রধান বিজ্ঞানী বেথ শ্যাপিরোর নেতৃত্বে একটি দল মাউসের জিন সম্পাদনা করে তাদের শরীরে ম্যামথের মতো কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে। তবে অধিকাংশ পরিবর্তন একেবারে ম্যামথের মতো নয়, বরং সামান্য পরিবর্তিত।

তারা মাউসের লোম বৃদ্ধি সংক্রান্ত অন্যান্য পরিচিত জিনগুলোর পরিবর্তনও পরীক্ষা করেছেন, যা ম্যামথদের মধ্যে পাওয়া যায় না।

এই গবেষণায় মাউসের সাতটি জিনে মোট আটটি পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে ইঁদুরগুলোর লোম দীর্ঘ এবং ঘন হয়ে ওঠে। এছাড়া, একটি বিশেষ জিন পরিবর্তনের কারণে তাদের লোম সাধারণ ধূসর রঙের পরিবর্তে বাদামি বর্ণ ধারণ করে।

তবে কি এটি ম্যামথ তৈরির পথে অগ্রগতি?

কয়েকজন বিজ্ঞানী বলছেন, গবেষণাটি ম্যামথের বৈশিষ্ট্য হাতির শরীরে সংযোজনের একটি পরীক্ষামূলক ধাপ হতে পারে।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউরবানা-শ্যাম্পেইন) জনসংখ্যা জিনতত্ত্ববিদ আলফ্রেড রোকা বলেন, “এটি ম্যামথ প্রকল্পের একটি ছোট ধাপ। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দেখায় যে ম্যামথের ডিএনএ-ভিত্তিক পরিবর্তন ইঁদুরের দেহে কাজ করছে।”

তবে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর বিবর্তনীয় জেনেটিসিস্ট ভিনসেন্ট লিঞ্চ মনে করেন, মাউসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত লোম বৃদ্ধি সংক্রান্ত জিন পরিবর্তনের প্রভাব এবং ম্যামথ থেকে নেওয়া তিনটি জিন পরিবর্তনের প্রভাব পৃথক করা কঠিন।

তবে বেথ শ্যাপিরো ব্যাখ্যা করেন যে, ম্যামথ এবং মাউসের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন বছরের বিবর্তনীয় ব্যবধান থাকায় সরাসরি ম্যামথের জিন সংযোজন করা সম্ভব নয়। এজন্য সুস্থ প্রাণী গঠনের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তন করতে হয়েছে।

ম্যামথ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ

কোলসালের লক্ষ্য হলো, বিলুপ্ত ম্যামথের প্রতিলিপি তৈরি করা নয়, বরং এমন একটি হাতি তৈরি করা যা ম্যামথদের পরিবেশগত ভূমিকা পূরণ করতে পারবে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীর জিনে আটটি পরিবর্তন করা এখন সাধারণ বিষয় বলে মনে করেন রিজেনবার্গ। তবে অনেক বেশি সংখ্যক পরিবর্তন আনতে হলে আরও উন্নত প্রযুক্তির দরকার হবে।

রিজেনবার্গ এবং তার সহকর্মীরা বর্তমানে গবেষণা করছেন কিভাবে নিয়ান্ডারথালদের শতাধিক বিশেষ জিন পরিবর্তন মানব স্টেম সেলে সংযোজন করা যায়। যদিও তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “কেউ নিয়ান্ডারথাল পুনরুদ্ধার করতে পারবে না, এবং করা উচিতও নয়।”

একইভাবে, একটি হাতিকে ম্যামথের মতো বৈশিষ্ট্য দিতে হলে অনেক বড় জিনগত পরিবর্তন লাগবে। কোলসাল এখনো এই লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেক দূরে রয়েছে।

সূত্র: Nature

পড়ুন:পৃথিবীতে কোন মৌলের প্রাচুর্যতা সবচেয়ে বেশি? ক্লিক

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
Orangutan
প্রাণীজগৎ

সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগী ৫ প্রাণী

প্রকৃতির অপার রহস্যের মাঝে মা-বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা অন্যতম বিস্ময়কর বিষয়। কিছু প্রাণী আছে যারা সন্তান জন্মের পর কোনো যত্নই নেয় না, আবার কিছু প্রাণী আছে

Read More »
টিকা নিচ্ছে বাইসন
প্রাণীজগৎ

স্বেচ্ছায় সূঁচের ওপর ঝুঁকে টিকা নিচ্ছে বাইসন!

দুটি তরুণ বাইসন ষাঁড় নিজেই টিকা নেওয়া শিখেছে, এমনটাই জানিয়েছে কেন্টের একটি প্রাণী উদ্যান। ক্যান্টারবেরির কাছে ওয়াইল্ডউড পার্কের তত্ত্বাবধায়করা জানিয়েছেন, তারা ষাঁড় দু’টিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ

Read More »
প্রাণীজগৎ

এশিয়ার ৫ চোখধাঁধানো পাখি

এশিয়া মহাদেশ প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর, এখানে বিস্তৃত বনাঞ্চল, পর্বতমালা, মরুভূমি এবং নদ-নদীতে বাস করে বহু অনন্য ও বিরল প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে কিছু পাখি তাদের অনন্য

Read More »
গিরগিটি152
প্রাণীজগৎ

বিশ্বের শীর্ষ ১০ গিরগিটি

গিরগিটি হল সরীসৃপ শ্রেণির একটি আকর্ষণীয় প্রাণী, যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কিছু অসাধারণ রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা, শিকার ধরার অভিনব

Read More »
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
প্রাণীজগৎ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার: বন্যজীবনের রাজা

রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বৈজ্ঞানিক নাম: Panthera tigris tigris) পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বাঘ প্রজাতি এবং বাঘের ছয়টি বিদ্যমান উপপ্রজাতির একটি। এরা প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে

Read More »
প্যারটফিশের মল
প্রাণীজগৎ

প্যারটফিশের মল সমুদ্রসৈকতের সাদা বালির গোপন উপাদান

তপ্ত রোদে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে ভরা একটি সাদা বালুর সৈকতে হাঁটার অনুভূতি অনন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সুন্দর সাদা বালির পেছনে আছে প্রকৃতির এক

Read More »
সজারু
প্রাণীজগৎ

সজারু কি কাঁটা ছুঁড়ে মারতে পারে?

সজারু নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়, বিশেষ করে তাদের কাঁটা ছুঁড়ে আক্রমণের ক্ষমতা নিয়ে। পাড়ার ফেসবুক গ্রুপে বা কারো কাছ থেকে শোনা সাবধানতার বার্তা হয়তো

Read More »
পেঙ্গুইন
প্রাণীজগৎ

পেঙ্গুইন এর কি হাঁটু থাকে?

পেঙ্গুইন আমাদের কাছে আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রাণী হিসেবে পরিচিত। তাদের অদ্ভুত হাঁটার ধরণ এবং পরিবেশের সঙ্গে তাদের অদ্ভুত মিল তাদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

Read More »
গোলাপি শালিক
নিবন্ধ

গোলাপি শালিক শীতের পরিযায়ী পাখি

শালিক, সবার চেনা পাখি। প্রধানত চার প্রজাতির শালিক আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়। তারা হলো ভাত শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক এবং খয়রালেজ কাঠশালিক। শালিকের

Read More »