বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ মহাকাশ মিশন

মহাকাশ মিশন
মানবসভ্যতার ইতিহাসে মহাকাশ মিশনগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তি, জ্ঞান এবং গবেষণার উন্নতির পাশাপাশি মহাকাশ অভিযানের খরচও আকাশচুম্বী। এ পর্যন্ত চালানো মিশনগুলোর মধ্যে কিছু মিশন এতটাই ব্যয়বহুল যে তা মানবতার সাহসিকতার এক অনন্য নিদর্শন। এখানে আলোচনা করা হয়েছে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ৭টি মহাকাশ মিশন নিয়ে।

১. ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS)

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS) পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করা একটি বৃহৎ মহাকাশ গবেষণা স্টেশন। এটি মানবজাতির অন্যতম বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে। ISS আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত এবং প্রতি ৯০ মিনিটে একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে।

বাজেট
ISS প্রকল্পটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। মোট বাজেট: প্রায় $১৫০ বিলিয়ন ডলার। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো: নাসা (যুক্তরাষ্ট্র), রোসকসমস (রাশিয়া), ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA), জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA), এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (CSA)। বিভিন্ন দেশ এই প্রকল্পে অর্থায়ন, প্রযুক্তি, এবং গবেষণা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। এর ফলে এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

সময়কাল
শুরু: ISS-এর নির্মাণ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে।
নির্মাণকাল: ১৯৯৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এর বিভিন্ন অংশ কক্ষপথে পাঠানো এবং সংযুক্ত করা হয়।
বর্তমান কার্যক্রম: ISS এখনও সক্রিয় এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

মিশন
ISS-এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মহাকাশ গবেষণা এবং পৃথিবী ও মহাকাশের মধ্যে সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

বিজ্ঞান ও গবেষণা: মহাকাশে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের প্রভাব নিয়ে গবেষণা। বায়োলজি, মেডিসিন, এবং পদার্থবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কার।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: মহাকাশযান এবং সরঞ্জামের কার্যকারিতা পরীক্ষা। ভবিষ্যৎ মঙ্গল এবং চাঁদ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি।

শিক্ষা ও সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিনিময়। শিক্ষার্থীদের জন্য মহাকাশ গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি।

বর্তমান অবস্থা
ISS বর্তমানে সক্রিয় এবং এটি প্রতিদিন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং বিভিন্ন মিশন পরিচালনা করে।

অধিবাসী সংখ্যা: ISS-এ সাধারণত ৭ জন নভোচারী অবস্থান করেন। তারা ছয় মাস ধরে পালাক্রমে কাজ করেন।

প্রদক্ষিণ হার: এটি প্রতিদিন প্রায় ১৬ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা: পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য এটি উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

সাম্প্রতিক কার্যক্রম:
নতুন বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
মহাকাশে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির পরীক্ষা।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ুর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ISS-এর কার্যক্রম ২০৩০ সাল পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি চাঁদ এবং মঙ্গল অভিযানের জন্য গবেষণাগার হিসেবে কাজ করবে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে মহাকাশ গবেষণার জন্য ব্যবহারের সুযোগ দেবে। আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম যোগ করা হবে।

k1LrUTydsUe0i2sp apollo 13 launch nasa

২. অ্যাপোলো প্রোগ্রাম

অ্যাপোলো প্রোগ্রাম হলো নাসার এক যুগান্তকারী মহাকাশ প্রকল্প, যার মাধ্যমে মানবজাতি প্রথমবারের মতো চাঁদে পদার্পণ করেছিল। ১৯৬০-এর দশকের মহাকাশ প্রতিযোগিতার সময় এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল এবং এটি মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

বাজেট
অ্যাপোলো প্রোগ্রাম মানবজাতির ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল মহাকাশ প্রকল্প। মোট বাজেট: $২৫.৪ বিলিয়ন ডলার (১৯৭৩ সালের হিসাব, যা বর্তমান মুদ্রামূল্যে প্রায় $১৫০ বিলিয়ন ডলার)।

উদ্দেশ্য: যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলমান মহাকাশ প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব স্থাপন এবং চাঁদে মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
সময়কাল

শুরুর সময়: ১৯৬১ সাল (প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির ঘোষণা অনুযায়ী)।

শেষের সময়: ১৯৭২ সাল।

মোট মিশন: ১৭টি, যার মধ্যে ৬টি সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে।

অ্যাপোলো ১১-এর তারিখ: ২০ জুলাই, ১৯৬৯। এই মিশনে প্রথমবার মানুষ চাঁদে পদার্পণ করে।

মিশন
অ্যাপোলো প্রোগ্রামের প্রধান লক্ষ্য ছিল চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং সেখান থেকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা।

মিশনের প্রধান ধাপ:

অ্যাপোলো ১ থেকে ৬: প্রাথমিক পরীক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কাজ। অ্যাপোলো ১ দুর্ঘটনায় তিনজন নভোচারী নিহত হন, যা প্রোগ্রামের জন্য বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।

অ্যাপোলো ৭ থেকে ১০: চাঁদের কক্ষপথে যান পাঠানোর জন্য পরীক্ষামূলক মিশন। চাঁদে অবতরণের জন্য প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি।

অ্যাপোলো ১১ থেকে ১৭: অ্যাপোলো ১১-এর মাধ্যমে চাঁদে প্রথম মানব পদার্পণ। পরবর্তী মিশনগুলোতে আরও গবেষণা এবং চাঁদের নমুনা সংগ্রহ।

অ্যাপোলো ১১-এর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখেন এবং বলেন, “That’s one small step for a man, one giant leap for mankind.” তার সঙ্গে ছিলেন বাস অলড্রিন, এবং তারা চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় ২১ ঘণ্টা কাটান। বর্তমান অবস্থা অ্যাপোলো প্রোগ্রাম ১৯৭২ সালে শেষ হলেও এর অবদান আজও অপরিসীম।

চাঁদের নমুনা: চাঁদ থেকে আনা ৩৮২ কিলোগ্রাম পাথর এবং মাটি আজও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রযুক্তিগত উত্তরাধিকার: অ্যাপোলো প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৈরি প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা নাসার ভবিষ্যৎ মিশনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

অনুপ্রেরণা: এই প্রোগ্রাম মহাকাশ গবেষণায় অগণিত বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের অনুপ্রাণিত করেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অ্যাপোলো প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নাসা এখন আর্টেমিস প্রোগ্রাম শুরু করেছে, যার লক্ষ্য চাঁদে পুনরায় মানুষ পাঠানো এবং সেখান থেকে মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া।

৩. জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST)

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope বা JWST) হলো নাসা এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোর (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি অত্যাধুনিক মহাকাশ টেলিস্কোপ। এটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে মহাবিশ্বের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কাজ করে।

বাজেট
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য বিশাল বাজেট নির্ধারিত হয়েছিল।
মোট বাজেট: $১০ বিলিয়ন ডলার।
বাজেট বৃদ্ধি: নির্মাণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ বিলম্ব এবং প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকবার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সময়কাল
শুরুর সময়: প্রাথমিক পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে।
নির্মাণকাল: ২০০৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত।

উৎক্ষেপণ তারিখ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১।

অবস্থান: এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ২-এ (L2) অবস্থান করছে।

মিশন
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের সূচনা এবং গঠনের রহস্য উদ্ঘাটন করা।

মিশনের প্রধান লক্ষ্য
মহাবিশ্বের আদিকালের অধ্যয়ন: বিগ ব্যাংয়ের পর প্রাথমিক নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সির গঠন পর্যবেক্ষণ।

গ্যালাক্সির বিবর্তন: গ্যালাক্সি কীভাবে সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ।

তারকা এবং গ্রহের গঠন: নতুন তারকা এবং গ্রহের গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ।

জীবনের সম্ভাবনা: এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করে জীবনের উপস্থিতির সম্ভাবনা অনুসন্ধান।

প্রযুক্তি এবং বৈশিষ্ট্য
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করে।

ইনফ্রারেড ক্যামেরা: ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে দূরবর্তী গ্যালাক্সি এবং তারাদের পর্যবেক্ষণ।

মিরর সিস্টেম: ৬.৫ মিটার প্রস্থের সোনায় মোড়ানো প্রধান আয়না, যা হাবল টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারে।

সানশিল্ড: পাঁচ স্তরের বিশেষ সানশিল্ড, যা টেলিস্কোপকে সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়।

বর্তমান অবস্থা
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বর্তমানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য পূরণ করছে।

গবেষণা কার্যক্রম: নতুন গ্যালাক্সি এবং গ্রহের ছবি তোলা। গ্যালাক্সির গঠন এবং তারকাদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ। বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা।

উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার: মহাবিশ্বের কিছু প্রাচীনতম গ্যালাক্সির ছবি। এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি চিহ্নিতকরণ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে আগামী দশক ধরে মহাকাশ গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এর মিশন অন্তত ১০ বছর চলবে এবং এর

প্রধান লক্ষ্য:
আরও গভীরে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ।
নতুন এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান।
মহাবিশ্বের গঠন এবং প্রসারণ সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ।

৪. স্পেস শাটল প্রোগ্রাম

স্পেস শাটল প্রোগ্রাম ছিল নাসার একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প, যার মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানের ধারণা বাস্তবায়িত হয়। এটি ১৯৭২ সালে শুরু হয়ে প্রায় তিন দশক ধরে চলেছে। প্রোগ্রামটি শুধু পৃথিবী থেকে মহাকাশে নভোচারী এবং সরঞ্জাম পাঠানোর জন্যই নয়, বরং মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বাজেট
স্পেস শাটল প্রোগ্রামের জন্য বিশাল বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল।

মোট ব্যয়: প্রায় $১৯৬ বিলিয়ন ডলার (বর্তমান মূল্যে)।
প্রতি মিশনের খরচ: গড়ে $৪৫০ মিলিয়ন ডলার।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানের ব্যবহার সত্ত্বেও, এই প্রোগ্রামটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল।

সময়কাল
শুরুর সময়: ১৯৭২ সালে প্রোগ্রামটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়।

প্রথম উৎক্ষেপণ: ১২ এপ্রিল, ১৯৮১ (স্পেস শাটল কলম্বিয়া)।

শেষ মিশন: ৮ জুলাই, ২০১১ (স্পেস শাটল আটলান্টিস)।

মোট সময়কাল: ৩০ বছর।

মোট মিশন সংখ্যা: ১৩৫টি।

মিশন
স্পেস শাটল প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে বিভিন্ন ধরণের কাজ সম্পাদন করা, যা সাধারণ রকেটের মাধ্যমে সম্ভব ছিল না।

প্রধান লক্ষ্য
মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ: ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS)-এর বিভিন্ন অংশ স্থাপন এবং সরবরাহ প্রদান। রাশিয়ার মির স্পেস স্টেশন-এ অংশগ্রহণ।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ: বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশ টেলিস্কোপ স্থাপন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ।

বিজ্ঞান ও গবেষণা: মহাকাশে ভরশূন্য পরিবেশে গবেষণা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।

উপাদান পরিবহন: মহাকাশে সরঞ্জাম, অংশ এবং নভোচারী পরিবহন।

চ্যালেঞ্জ এবং দুর্ঘটনা
স্পেস শাটল প্রোগ্রামের ইতিহাসে দুটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল:

চ্যালেঞ্জার (Challenger) দুর্ঘটনা: ২৮ জানুয়ারি, ১৯৮৬ সালে উৎক্ষেপণের ৭৩ সেকেন্ড পর বিস্ফোরণ, ৭ জন নভোচারীর মৃত্যু।

কলম্বিয়া (Columbia) দুর্ঘটনা: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সালে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় টুকরো হয়ে যাওয়া। এতে ৭ জন নভোচারীর মৃত্যু। এই দুর্ঘটনাগুলো প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তুলেছিল।

বর্তমান অবস্থা
উচ্চ ব্যয় এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে স্পেস শাটল প্রোগ্রাম ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়। নতুন প্রযুক্তি এবং প্রাইভেট কোম্পানির সহযোগিতায় কম খরচে মহাকাশ মিশন পরিচালনার দিকে নাসার আগ্রহ। স্পেস শাটল প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাইভেট কোম্পানি যেমন স্পেসএক্স এবং ব্লু অরিজিন নতুন মহাকাশযান তৈরি করছে। আর্টেমিস প্রোগ্রাম এবং ভবিষ্যৎ মঙ্গল অভিযানের জন্য এর প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভবিষ্যৎ
স্পেস শাটল প্রোগ্রামের সমাপ্তি সত্ত্বেও, এর প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় বিশাল প্রভাব ফেলছে। নতুন প্রজন্মের মহাকাশযান, যেমন স্পেসএক্স-এর ড্রাগন ক্যাপসুল এবং নাসার ওরিয়ন স্পেসক্রাফ্ট, মহাকাশ গবেষণার পথ আরও সহজ করছে।

৫. মার্স রোভার প্রোগ্রাম (Curiosity ও Perseverance)
মার্স রোভার প্রোগ্রাম নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যার মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠে রোভার পাঠিয়ে মানবজাতি মঙ্গলের পরিবেশ, ভূতত্ত্ব এবং সম্ভাব্য জীবনের সন্ধানে কাজ করছে। রোভার প্রোগ্রামটি এখন পর্যন্ত মঙ্গল অভিযানকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে, যা মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

বাজেট
মার্স রোভার প্রোগ্রামের জন্য নাসা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোভার মিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছে।

মোট বাজেট: মার্স রোভার প্রোগ্রামটির মোট ব্যয় প্রায় $২৭ বিলিয়ন ডলার (২০২১ পর্যন্ত)।
প্রতি রোভার মিশনের খরচ: প্রতি রোভার উৎক্ষেপণের জন্য বাজেট প্রায় $২.৫ বিলিয়ন ডলার।
মার্স রোভার প্রোগ্রামের মধ্যে বৃহৎ বাজেটের অন্যতম কারণ হল, মঙ্গলে দূরবর্তী এবং জটিল পরিবেশে রোভার পাঠানো, যা অত্যন্ত উচ্চমানের প্রযুক্তি এবং সম্পদের প্রয়োজন।

সময়কাল
প্রথম মিশন: ১৯৯৭ সালে তেলসট-১ (Sojourner), যা ছিল মঙ্গলগ্রহে প্রথম রোভার, পাঠানো হয়।
বর্তমান মিশন: ২০২১ সালে পারসিভিয়ারেন্স রোভার পাঠানো হয়।
মোট সময়কাল: মার্স রোভার প্রোগ্রাম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে এবং বর্তমানে এটি চলমান রয়েছে, নতুন মিশনগুলো রোভার পাঠানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

মিশন
মার্স রোভার প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব, জলবায়ু, এবং ভূতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণা।

প্রধান মিশনগুলি
Sojourner (১৯৯৭): এটি ছিল প্রথম মঙ্গল রোভার, যা মার্স প্রোস্পেক্টর মিশনের অংশ হিসেবে মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধে অবতরণ করে। মূলত এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠে ভূমি এবং পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছিল।

Spirit and Opportunity (২০০৪): দুটি রোভার একে অপরের মাধ্যমে মঙ্গলের পৃষ্ঠে গবেষণা চালানোর জন্য প্রেরণ করা হয়। Spirit রোভার মঙ্গলের গুলফ বা অঙ্গরাজ্যের মাটিতে খনন এবং ভূতত্ত্বের গবেষণা চালিয়েছিল, যখন Opportunity রোভার পুরো মঙ্গল মহাদেশের নানা অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষামূলক কাজ করেছে। Opportunity প্রায় ১৪ বছর মঙ্গলে সফলভাবে কাজ করেছে।

Curiosity (২০১২): এটি মঙ্গলের গ্যালি ক্রেটারে অবতরণ করে এবং পৃথিবীর মতো পরিবেশের খোঁজে কাজ করেছে। Curiosity রোভার মঙ্গলের ভূতত্ত্ব এবং বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে। এটি এখনও কার্যকরী এবং পৃথিবী থেকে নিয়মিত তথ্য পাঠাচ্ছে।

Perseverance (২০২১): এটি মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটার-এ অবতরণ করে। Perseverance রোভার জীবন এবং জীবন সম্ভাবনার চিহ্ন অনুসন্ধান করছে এবং মঙ্গল মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে। এটি ভবিষ্যতে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য মঙ্গল গ্রহের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এটি মঙ্গলে প্রথমবারের মতো ড্রোন (Ingenuity) সফলভাবে পরিচালনা করেছে, যা ইতিহাসের প্রথম পরিচালিত উড়ন্ত যান।

বর্তমান অবস্থা
মার্স রোভার প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত রোভারগুলো বর্তমানে মঙ্গল পৃষ্ঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

Curiosity: এখনও চলমান এবং মঙ্গলের ভূতত্ত্ব এবং বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে নতুন তথ্য পাঠাচ্ছে।
Perseverance: নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্য মঙ্গলগ্রহে গবেষণা করছে এবং জীবনের সম্ভাবনা খোঁজার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
Ingenuity (ড্রোন): এটি সফলভাবে মার্স রোভার প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে উড়াল দেয় এবং গবেষণার জন্য বিভিন্ন স্থানে ছবি এবং ভিডিও সংগ্রহ করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মার্স রোভার প্রোগ্রামের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

মঙ্গলগ্রহের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ: Perseverance রোভার ভবিষ্যতে মঙ্গলের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে ফেরত আনবে।
মঙ্গলে প্রাণের উপস্থিতি: Mars Sample Return (MSR) প্রোগ্রামের মাধ্যমে মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্বের খোঁজ আরও গভীরভাবে নেওয়া হবে।
মঙ্গল অভিযানে মানুষের প্রস্তুতি: মার্স রোভার প্রোগ্রাম মঙ্গলে ভবিষ্যতে মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে।

৬. হাবল স্পেস টেলিস্কোপ

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope বা HST) মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি নাসার একটি কক্ষপথে স্থাপিত টেলিস্কোপ, যা মহাবিশ্বের গভীর রহস্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯০ সালে উৎক্ষেপণের পর থেকে এটি মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি ধারণ করেছে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছে।

বাজেট
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য প্রাথমিক বাজেটের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণেও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে।

মোট নির্মাণ খরচ: $৪.৭ বিলিয়ন ডলার।
রক্ষণাবেক্ষণ ও মিশন সমর্থন: প্রায় $১১ বিলিয়ন ডলার (২০২১ পর্যন্ত)।
মোট ব্যয়: প্রায় $১৬ বিলিয়ন ডলার।
এই ব্যয় সত্ত্বেও, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক বিশাল সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।

সময়কাল
উৎক্ষেপণের তারিখ: ২৪ এপ্রিল, ১৯৯০।
অবতরণ স্থান: পৃথিবীর লো আর্থ অরবিট (প্রায় ৫৪৭ কিলোমিটার উচ্চতায়)।
মিশন সময়কাল: প্রাথমিকভাবে ১৫ বছর ধরে কাজ করার জন্য পরিকল্পিত হলেও, এটি ৩৪ বছর পরও কার্যকর।

মিশন
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য ছিল মহাবিশ্বের গভীরে থাকা নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, এবং অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা।

প্রধান লক্ষ্য

মহাবিশ্বের গঠন এবং সম্প্রসারণ:
মহাবিশ্বের বয়স এবং সম্প্রসারণের হার নির্ধারণ।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ।

নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ:
নবীন গ্যালাক্সি এবং তারার গঠন প্রক্রিয়া বোঝা।
সুপারনোভা এবং ব্ল্যাক হোলের মতো মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ।

এক্সোপ্ল্যানেট এবং জীবনের সন্ধান:
এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ।
আমাদের সৌরজগতের বাইরের সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহ খোঁজা।

মহাকাশের গভীর ছবি:
Hubble Deep Field এবং Ultra Deep Field ছবির মাধ্যমে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর ছবি ধারণ।

চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্য
উৎক্ষেপণের পরপরই হাবল স্পেস টেলিস্কোপের প্রধান আয়নায় ত্রুটি ধরা পড়ে, যা শুরুতে এর কার্যক্ষমতাকে সীমিত করেছিল।

আয়নার ত্রুটি:
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে অস্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়।
১৯৯৩ সালে মেরামতের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করা হয়।

মেরামতি মিশন:
৫টি আলাদা স্পেস শাটল মিশনের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। প্রতিটি মেরামতি মিশন হাবলকে আরও কার্যকর করেছে।

বর্তমান অবস্থা
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এখনও কার্যকর এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করছে।

অপারেশন:
এটি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং নিয়মিত ছবি ও তথ্য পাঠাচ্ছে।
নক্ষত্রের জন্ম, গ্যালাক্সির গঠন এবং এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহ।

উত্তরসূরি: হাবল স্পেস টেলিস্কোপের কাজ ধীরে ধীরে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) গ্রহণ করছে। তবে, হাবল তার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট গবেষণায় অবদান রেখে চলেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এখনও পুরোপুরি কার্যকর। তবে এর কার্যক্ষমতা এক সময় সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।

কাজের সমাপ্তি: ২০৩০-এর দশকের মধ্যে হাবল তার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারে। এটি তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করে ধ্বংস হবে।

পরিকল্পনা: হাবলের সংগ্রহ করা তথ্য এবং অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ মহাকাশ মিশন, যেমন JWST এবং অন্যান্য উন্নত টেলিস্কোপে প্রয়োগ করা হবে।

৭. গ্যালিলিও প্রোগ্রাম

গ্যালিলিও প্রোগ্রাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) একটি বৈশ্বিক ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (GNSS) প্রকল্প, যা ইউরোপের স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য ন্যাভিগেশন সেবা নিশ্চিত করার জন্য গঠন করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের GPS এবং রাশিয়ার GLONASS-এর বিকল্প হিসাবে কাজ করে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে এই প্রকল্পটি পরিচালনা করছে।

বাজেট
গ্যালিলিও প্রোগ্রাম একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প, যা বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে।

প্রাথমিক বাজেট: ৩ বিলিয়ন ইউরো।
বর্তমান ব্যয়: প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরো (২০২৪ পর্যন্ত)।
রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়: বছরে আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ইউরো।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল একটি উচ্চমানের, সঠিক এবং স্বাধীন ন্যাভিগেশন সেবা তৈরি করা, যা বিশ্বের যেকোনো স্থানে কাজ করবে।

সময়কাল
প্রকল্প শুরু: ২০০৩
প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ: ২০১১
সম্পূর্ণ কার্যক্রম শুরু: ২০১৬
বর্তমান অবস্থা: ২০২৪ সালে গ্যালিলিও সিস্টেম সক্রিয় এবং বিশ্বব্যাপী সেবা প্রদান করছে।

মিশন
গ্যালিলিও প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য ইউরোপের জন্য একটি স্বাধীন এবং উন্নত ন্যাভিগেশন সেবা প্রদান করা।

প্রধান লক্ষ্য

উন্নত ন্যাভিগেশন:
প্রতিটি সেক্টরে, যেমন পরিবহন, সামরিক, এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নির্ভুল ন্যাভিগেশন ডেটা সরবরাহ।
স্বয়ংচালিত যানবাহন, বিমান চলাচল, এবং নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও নিরাপদ করা।

অবস্থান নির্ধারণের নির্ভুলতা:
গ্যালিলিও সিস্টেমে ২৪টি কার্যকরী স্যাটেলাইট এবং অতিরিক্ত ৬টি রিজার্ভ স্যাটেলাইট রয়েছে।
এটি প্রায় ১ মিটার বা তার চেয়ে কম ত্রুটিসহ অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা:
জরুরি সেবার জন্য দ্রুততম সময়ে সংকেত সরবরাহ।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজে সহায়তা করা।

বাণিজ্যিক সুবিধা:
স্মার্টফোন, ন্যাভিগেশন ডিভাইস, এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক পরিষেবায় নির্ভুল ডেটা প্রদান।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি।

সাফল্য
গ্যালিলিও প্রোগ্রাম ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহার:
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব স্মার্টফোন এবং ডিভাইস গ্যালিলিও সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

নির্ভুলতা:
এটি অন্যান্য সিস্টেমের চেয়ে বেশি নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য।

জরুরি সংকেত সেবা:
২০১৮ সালে গ্যালিলিও রেসকিউ সার্ভিস চালু করেছে, যা সমুদ্রে বা দুর্গম এলাকায় হারিয়ে যাওয়া মানুষকে দ্রুত খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।

বর্তমান অবস্থা
গ্যালিলিও প্রোগ্রাম বর্তমানে পুরোপুরি কার্যকর এবং বিশ্বব্যাপী সেবা প্রদান করছে।

সক্রিয় স্যাটেলাইট: বর্তমানে গ্যালিলিও সিস্টেমে ৩০টি স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে।
ব্যবহারকারী: বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩ বিলিয়ন ব্যবহারকারী গ্যালিলিও ন্যাভিগেশন সেবার উপর নির্ভর করছে।
তথ্য নিরাপত্তা: গ্যালিলিও সিস্টেম উন্নত এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যা এটিকে অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তুলেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গ্যালিলিও প্রোগ্রাম ভবিষ্যতে আরও উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানের জন্য কাজ করছে।

নতুন স্যাটেলাইট:
আরও উন্নত এবং শক্তিশালী স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন।
নির্ভুলতা বৃদ্ধি:
অবস্থান নির্ধারণের নির্ভুলতা উন্নত করতে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সাথে সহযোগিতা করে গ্যালিলিওকে আরও শক্তিশালী করা।

৮. স্পেস লঞ্চ সিস্টেম

স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (Space Launch System বা SLS) নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট, যা চন্দ্র, মঙ্গল এবং তার বাইরের গভীর মহাকাশ মিশনগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার লক্ষ্য মানুষকে আবার চাঁদে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো।

বাজেট
স্পেস লঞ্চ সিস্টেম প্রকল্পটি নাসার অন্যতম ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলোর একটি।

প্রাথমিক অনুমিত বাজেট: $১৮ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান ব্যয়: আনুমানিক $২৩ বিলিয়ন ডলার (২০২৪ পর্যন্ত)।
মোট ব্যয়: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর জন্য অতিরিক্ত কয়েক বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে।
এত ব্যয়ের পরেও SLS-এর শক্তি ও ক্ষমতা মহাকাশ অভিযানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সময়কাল
প্রকল্প শুরু: ২০১১ সালে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত।
প্রথম উৎক্ষেপণ: ১৬ নভেম্বর, ২০২২ (আর্টেমিস I মিশনের অংশ)।
নির্ধারিত মিশনের সময়কাল: ২০২০-এর দশক থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ গভীর মহাকাশ মিশন পর্যন্ত।

মিশন
স্পেস লঞ্চ সিস্টেম নাসার গভীর মহাকাশ মিশনগুলোর একটি মাইলফলক। এটি শুধুমাত্র চন্দ্র অভিযানে নয়, বৃহত্তর মহাকাশ অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হবে।

প্রধান লক্ষ্য

চাঁদে মানুষ পাঠানো (আর্টেমিস প্রোগ্রাম):
চাঁদে নতুন ঘাঁটি স্থাপন।
ভবিষ্যতে মঙ্গল অভিযানের জন্য প্রস্তুতি।

মহাকাশ গবেষণা:
বৃহস্পতির উপগ্রহ এবং অন্যান্য গ্রহাণুতে রোবোটিক অভিযান।
মহাবিশ্বের গভীরতর রহস্য উদ্ঘাটন।

বাণিজ্যিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
বাণিজ্যিক মহাকাশ মিশনের সহায়তা।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ।

মানববসতি স্থাপন:
মঙ্গলগ্রহ এবং তার বাইরের জগতগুলোতে মানুষের স্থায়ী বসতি স্থাপনে সহায়তা।

শক্তি এবং ক্ষমতা
SLS নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট।

উৎক্ষেপণ ক্ষমতা: পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৯৫ টন মালামাল বহন করতে সক্ষম।
পরবর্তী সংস্করণ: ১৩০ টন পর্যন্ত বহনের ক্ষমতা থাকবে।
গতির ক্ষমতা: গভীর মহাকাশে ভারী পে-লোড পাঠাতে এর চেয়ে শক্তিশালী রকেট আগে কখনো তৈরি হয়নি।
সাফল্য
স্পেস লঞ্চ সিস্টেম ইতিমধ্যেই নাসার আর্টেমিস I মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে।

আর্টেমিস ১:
২০২২ সালের নভেম্বরে চাঁদে মহাকাশযান ওরিয়ন সফলভাবে পাঠানো।
মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়াই পরীক্ষামূলক মিশন।

আর্টেমিস ২:
২০২৪ সালের জন্য পরিকল্পিত।
এই মিশনে মানুষ প্রথমবারের মতো SLS-এর মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে যাবে।

আর্টেমিস ৩:
২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত।
মানুষের আবার চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ।

বর্তমান অবস্থা
স্পেস লঞ্চ সিস্টেম বর্তমানে নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে সক্রিয়।

সক্রিয় উন্নয়ন:
ভবিষ্যৎ মিশনের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং উপাদান যোগ করা হচ্ছে।

মহাকাশযানের উন্নতি:
SLS-এর ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর কাজ চলছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
বিভিন্ন দেশ এবং বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্পেস লঞ্চ সিস্টেম ভবিষ্যতে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আর্টেমিস প্রোগ্রাম:
চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন এবং মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি।

মঙ্গল মিশন:
মানুষের মঙ্গলগ্রহে অবতরণের জন্য SLS ব্যবহার।

গভীর মহাকাশ গবেষণা:
বৃহস্পতির ইউরোপা এবং শনির টাইটানের মতো গ্রহাণুগুলোতে মিশন পরিচালনা।

৯. ওরিয়ন মহাকাশযান

ওরিয়ন মহাকাশযান নাসার আধুনিকতম ক্রু ক্যাপসুল, যা গভীর মহাকাশে মানুষের যাত্রা পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং চাঁদ, মঙ্গল এবং গভীর মহাকাশ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

বাজেট
ওরিয়ন প্রকল্পটি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একটি বিশাল বাজেটের অধীনে পরিচালিত হয়েছে।

প্রাথমিক বাজেট: ৬.৩ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান ব্যয়: আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলার (২০২৪ পর্যন্ত)।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য বাজেট: আর্টেমিস মিশনের আওতায় আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।
ওরিয়নের জটিল প্রযুক্তি এবং উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা এই প্রকল্পের উচ্চ ব্যয়ের অন্যতম কারণ।

সময়কাল
প্রকল্পের শুরু: ২০০৬ সালে।
প্রথম উৎক্ষেপণ: ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪ (ইএফটি-১ মিশন, পরীক্ষামূলক)।
পরিকল্পিত মিশনের সময়কাল: ২০২০-এর দশক থেকে ২০৫০-এর দশক পর্যন্ত।

মিশন
ওরিয়ন মহাকাশযানের মূল উদ্দেশ্য হল গভীর মহাকাশে মানুষের যাত্রা সুনিশ্চিত করা।

প্রধান লক্ষ্য

চাঁদে মানুষ পাঠানো (আর্টেমিস প্রোগ্রাম): মানুষের চাঁদে অবতরণ এবং গবেষণা কার্যক্রম। ভবিষ্যতের গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি।

মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মানুষের মঙ্গলগ্রহে যাত্রার জন্য প্রযুক্তিগত এবং অপারেশনাল পরীক্ষা।

গভীর মহাকাশ গবেষণা: চাঁদ ও মঙ্গলের বাইরের গ্রহাণু এবং অন্যান্য জগতের অনুসন্ধান।

মানব নিরাপত্তা: মহাকাশে মানুষের সুরক্ষা এবং জীবনধারণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার।

বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা
ওরিয়ন মহাকাশযানটি উন্নত প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রসিদ্ধ।

ক্রু ক্যাপাসিটি: চারজন মহাকাশচারী বহন করতে সক্ষম।
অপারেশনাল ক্ষমতা: ২১ দিন পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে মহাকাশে থাকতে পারে।
তাপ সুরক্ষা: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় ৫,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপ সহ্য করতে সক্ষম।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: উৎক্ষেপণের সময় সমস্যা হলে দ্রুত ক্রু উদ্ধার করার প্রযুক্তি সংযোজন।

সাফল্য
ওরিয়ন মহাকাশযান ইতিমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

ইএফটি-১ (Exploration Flight Test-1):
২০১৪ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ।
তাপ সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং পুনঃপ্রবেশের প্রযুক্তি পরীক্ষা।

আর্টেমিস ১ (২০২২):
প্রথমবার ক্রু ছাড়া চাঁদের কক্ষপথে সফল উৎক্ষেপণ এবং ফিরে আসা।
ভবিষ্যতের ক্রু মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ।

আর্টেমিস ২ (২০২৪-এ পরিকল্পিত):
চাঁদের কক্ষপথে প্রথম মানবযাত্রার জন্য প্রস্তুতি।

বর্তমান অবস্থা

উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন:
ওরিয়ন মহাকাশযানের নকশা এবং প্রযুক্তিতে ধারাবাহিক উন্নয়ন চলছে।

পরবর্তী মিশন:
আর্টেমিস II এবং III-এর প্রস্তুতি চলমান।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) ওরিয়নের সার্ভিস মডিউল তৈরি করেছে।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আর্টেমিস প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ:
চাঁদে গবেষণা ঘাঁটি স্থাপন।
চাঁদকে মঙ্গল অভিযানের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার।

মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি:
মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর জন্য ওরিয়ন মহাকাশযানকে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য করা।

বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক মিশন:

বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় ওরিয়নের ভূমিকা নিশ্চিত করা।

১০. গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস)

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নেভিগেশন ব্যবস্থা, যা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে অবস্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বেসামরিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাজেট
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের উন্নয়ন এবং পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় হয়েছে।

প্রাথমিক ব্যয়: $১২ বিলিয়ন ডলার।
বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়: $৭৫০ মিলিয়ন ডলার।
মোট ব্যয়: ১৯৭০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় $২৫ বিলিয়ন ডলার।

সময়কাল
উৎপত্তি: ১৯৭৩ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে শুরু হয়।
পরিকল্পিত সমাপ্তি: ১৯৯৩ সালে ২৪টি স্যাটেলাইট স্থাপন সম্পন্ন হয়।
পরবর্তী উন্নয়ন: বর্তমান সময় পর্যন্ত নতুন স্যাটেলাইট এবং প্রযুক্তি যোগ করা হচ্ছে।

মিশন
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হল নির্ভুল অবস্থান, গতিবেগ এবং সময় নির্ধারণের সুবিধা প্রদান।

প্রধান লক্ষ্য

সামরিক ব্যবহার:
বিশ্বব্যাপী সামরিক যানবাহন, অস্ত্র এবং সেনাবাহিনীর নেভিগেশন।

বেসামরিক ব্যবহার:
পরিবহন, মোবাইল ফোন, এবং বাণিজ্যিক জাহাজের সঠিক নেভিগেশন।
জরুরি অবস্থায় উদ্ধার কার্যক্রম।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা:
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন নিরীক্ষণ।

ব্যক্তিগত ব্যবহার:
দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন, গাড়ি এবং ফিটনেস ট্র্যাকারগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জিপিএস ব্যবহার করে।

বৈশিষ্ট্য এবং কার্যক্ষমতা
জিপিএস এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা সারা বিশ্বে নির্ভুল তথ্য প্রদান করতে পারে।

স্যাটেলাইট সংখ্যা: ৩১টি সক্রিয় স্যাটেলাইট।
কভারেজ: পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ২৪/৭ পরিষেবা।
সঠিকতা: ১-৫ মিটার পর্যন্ত অবস্থান নির্ধারণের ক্ষমতা।
সময়: প্রতি সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগেরও কম সময়ে নির্ভুল সময় প্রদান।

সাফল্য
জিপিএস মানবজীবনে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

পরিবহন: বিমান, জাহাজ এবং গাড়ি চলাচলে অভূতপূর্ব নির্ভুলতা।

দূরবর্তী সেবা: অনলাইন ডেলিভারি সেবা এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপে জিপিএস অপরিহার্য।

কৃষি: স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থায় সঠিক জমি চাষের জন্য ব্যবহৃত।

জরুরি উদ্ধার: প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবিত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্তকরণ।

বর্তমান অবস্থা
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ক্রমাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে চলছে।

প্রযুক্তিগত উন্নতি:
জিপিএস ব্লক III-এর মাধ্যমে আরও নির্ভুল সেবা প্রদান।
নতুন স্যাটেলাইট প্রবর্তন এবং পুরোনো স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা:
অন্যান্য দেশগুলোর নিজস্ব নেভিগেশন ব্যবস্থা (যেমন, রাশিয়ার GLONASS, ইউরোপের Galileo এবং চীনের BeiDou) তৈরি হলেও জিপিএস এখনও শীর্ষে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নতুন স্যাটেলাইট: পরবর্তী প্রজন্মের জিপিএস ব্লক III স্যাটেলাইট স্থাপন।

বেসামরিক সেবা উন্নয়ন: আরও বেশি নির্ভুল বেসামরিক নেভিগেশন সুবিধা।

মহাকাশ অনুসন্ধান: ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনে জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহার।

এই ব্যয়বহুল মহাকাশ মিশনগুলো শুধু আর্থিক দিক থেকে বিশাল নয়, মানব ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির একেকটি মাইলফলক। এগুলোর মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে গভীরতর জ্ঞান অর্জন করেছি এবং প্রযুক্তির নতুন নতুন দিক উন্মোচন করেছি। ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানগুলো আরও চমকপ্রদ এবং উদ্ভাবনী হবে বলে আশা করা যায়।

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
মহাকাশে সেলফোন
প্রযুক্তি

মহাকাশে সেলফোন কীভাবে সম্ভব?

মহাকাশে সেলফোন ব্যবহার করার ধারণাটি কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনালেও বর্তমানে এটি সম্ভব হয়ে উঠেছে নাসার গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে। মহাকাশে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় স্যাটেলাইট

Read More »
তারা ও গ্রহ
মহাবিশ্ব

তারা ও গ্রহ: দুটোর পার্থক্য কী?

জগৎ-ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যময় দিকগুলো আমাদের মুগ্ধ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। রাতের আকাশে তারা ও গ্রহের ঝলমলে উপস্থিতি আমাদের কৌতূহলকে জাগ্রত করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না

Read More »
কম্পিউটারের ইতিহাস
প্রযুক্তি

এনিয়াক : বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটারের ইতিহাস

এনিয়াক (ENIAC) বা ইলেক্ট্রনিক নিউমেরিক্যাল ইন্টিগ্রেটর অ্যান্ড কম্পিউটার বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৪৩ সালে এবং ১৯৪৫ সালে সফলভাবে চালু

Read More »
উইকিপিডিয়া
প্রযুক্তি

উইকিপিডিয়া: জ্ঞান বিনিময়ে বিশ্ববিপ্লব

উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত অনলাইন বিশ্বকোষ যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিনামূল্যে জ্ঞান প্রদান করে। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে যেকোনো ব্যক্তি তথ্য যোগ করতে, সম্পাদনা করতে

Read More »
গাছ থেকে কাগজ
প্রযুক্তি

গাছ থেকে কাগজ উৎপাদন প্রক্রিয়া

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কাগজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শিক্ষা, তথ্য সংরক্ষণ, শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজ- সব ক্ষেত্রেই কাগজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, কাগজ

Read More »
স্টেথোস্কোপ
প্রযুক্তি

স্টেথোস্কোপ: চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ

স্টেথোস্কোপ (Stethoscope) চিকিৎসা জগতে একটি অপরিহার্য যন্ত্র, যা চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে। মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ শব্দ, বিশেষ করে হৃদস্পন্দন এবং ফুসফুসের শব্দ, শ্রবণ করার

Read More »
পার্কার সোলার প্রোব
বিজ্ঞান

পার্কার সোলার প্রোব: সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে ইতিহাস গড়ল নাসা

নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ সম্প্রতি সূর্যের সর্বাধিক নিকটবর্তী অবস্থানে পৌঁছে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সময় ২৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার, সকাল ১১টায় প্রোবটি সূর্যের

Read More »
কনকর্ড
বিজ্ঞান

কনকর্ড: শব্দের চেয়েও দ্রুত ছুটত যে বিমান

কনকর্ড বিমান, একটি সময়ে যা আকাশপথের রাজা হিসেবে বিবেচিত হতো, শব্দের গতির চেয়েও দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে ইতিহাসে নিজের নাম লিখে রেখেছে। ১৯৭৬ সালে এর

Read More »
মৌলের
বিজ্ঞান

পৃথিবীতে কোন মৌলের প্রাচুর্যতা সবচেয়ে বেশি?

পৃথিবী বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রাকৃতিকভাবে বা মানুষের দ্বারা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে পর্যায় সারণিতে ১১৮টি মৌল শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯২টি মৌল

Read More »