চার্লস ডারউইন Charles Darwin (১৮০৯-১৮৮২) ছিলেন একজন ইংরেজ প্রকৃতিবিদ, ভূতত্ত্ববিদ এবং জীববিজ্ঞানী, যিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ আধুনিক জীববিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
চার্লস রবার্ট ডারউইন ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯ সালে ইংল্যান্ডের শ্রুসবারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন চিকিৎসক, আর তার দাদা ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইরাসমাস ডারউইন। ছোটবেলা থেকেই চার্লস প্রকৃতির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে যান, কিন্তু তা তার মনঃপূত হয়নি। পরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব পড়েন, তবে প্রকৃতিবিদ্যায় তার আগ্রহ ছিল প্রবল।
১৮৩১ সালে, চার্লস ডারউইন এইচএমএস বিগল নামের এক গবেষণা জাহাজে বিশ্বভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণের সময় তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি লক্ষ করেন, দ্বীপভেদে একই ধরনের প্রাণীদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী।
এরপর তিনি ‘On the Origin of Species’ (১৮৫৯) গ্রন্থে তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জীবেরা তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং বিবর্তিত হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু শক্তিশালী প্রাণীই নয়, বরং পরিবেশের সাথে সবচেয়ে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো প্রাণীরা টিকে থাকে এবং প্রজনন করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রজাতির ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূল ধারণা হলো:
১. জীবজগতের প্রতিটি সদস্য কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে।
২. পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম জীবগুলো টিকে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
৩. সময়ের সাথে সাথে এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তিত হতে পারে এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাতে পারে।
তার তত্ত্ব প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তিনি তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন। তবে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে তার গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং আধুনিক জেনেটিক্স ও ডিএনএ গবেষণা তার তত্ত্বকে আরও সমর্থন করে।
চার্লস ডারউইনের আবিষ্কার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গবেষণা ও চিন্তাধারা জীববিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং আজও তার তত্ত্ব বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিবর্তন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, এবং প্রাণীবিদ্যা ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে।