বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

চার্লস ডারউইন: আধুনিক জীববিজ্ঞানের পথিকৃৎ

চার্লস ডারউইন
চার্লস ডারউইন Charles Darwin (১৮০৯-১৮৮২) ছিলেন একজন ইংরেজ প্রকৃতিবিদ, ভূতত্ত্ববিদ এবং জীববিজ্ঞানী, যিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ আধুনিক জীববিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

চার্লস রবার্ট ডারউইন ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯ সালে ইংল্যান্ডের শ্রুসবারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন চিকিৎসক, আর তার দাদা ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইরাসমাস ডারউইন। ছোটবেলা থেকেই চার্লস প্রকৃতির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে যান, কিন্তু তা তার মনঃপূত হয়নি। পরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব পড়েন, তবে প্রকৃতিবিদ্যায় তার আগ্রহ ছিল প্রবল।

১৮৩১ সালে, চার্লস ডারউইন এইচএমএস বিগল নামের এক গবেষণা জাহাজে বিশ্বভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণের সময় তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি লক্ষ করেন, দ্বীপভেদে একই ধরনের প্রাণীদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী।

এরপর তিনি ‘On the Origin of Species’ (১৮৫৯) গ্রন্থে তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জীবেরা তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং বিবর্তিত হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু শক্তিশালী প্রাণীই নয়, বরং পরিবেশের সাথে সবচেয়ে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো প্রাণীরা টিকে থাকে এবং প্রজনন করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রজাতির ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটে।

প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূল ধারণা হলো:
১. জীবজগতের প্রতিটি সদস্য কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে।
২. পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম জীবগুলো টিকে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
৩. সময়ের সাথে সাথে এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তিত হতে পারে এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাতে পারে।

তার তত্ত্ব প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তিনি তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন। তবে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে তার গবেষণার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং আধুনিক জেনেটিক্স ও ডিএনএ গবেষণা তার তত্ত্বকে আরও সমর্থন করে।

চার্লস ডারউইনের আবিষ্কার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গবেষণা ও চিন্তাধারা জীববিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং আজও তার তত্ত্ব বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিবর্তন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, এবং প্রাণীবিদ্যা ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Email
স্বর্ণ কেনো এতো দামী
বিজ্ঞান

স্বর্ণ কেনো এতো দামী? স্বর্ণের উৎপত্তি, ব্যবহার ও গুরুত্ব

স্বর্ণ বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান ধাতু, যা প্রাচীনকাল থেকে মানুষের কাছে সমাদৃত। স্বর্ণের উচ্চমূল্যের কারণ বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, স্বর্ণের প্রাপ্যতা খুবই সীমিত।

Read More »
মস্তিষ্ক কাচে পরিণত
বিজ্ঞান

মানুষের মস্তিষ্ক কাচে পরিণত হয়েছে আগ্নেয়গিরির তাপের প্রভাবে

মস্তিষ্ক কাচে পরিণত হয় প্রায় ২,০০০ বছর আগে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে প্রাণ হারানো এক যুবকের। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, তার মস্তিষ্ক সংরক্ষিত হয়েছিল এবং উচ্চ তাপমাত্রার

Read More »
আগুন
বিজ্ঞান

আগুন আসলে কী?

আগুন এমন এক জিনিস যা দেখলে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। এর নাচানাচি, উজ্জ্বলতা, শক্তি এবং রহস্যময়তা আমাদের মোহিত করে। কখনও বিপজ্জনক, কখনও প্রশান্তিদায়ক—আগুন আমাদের জন্য

Read More »
তারা ও গ্রহ
মহাবিশ্ব

তারা ও গ্রহ: দুটোর পার্থক্য কী?

জগৎ-ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যময় দিকগুলো আমাদের মুগ্ধ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। রাতের আকাশে তারা ও গ্রহের ঝলমলে উপস্থিতি আমাদের কৌতূহলকে জাগ্রত করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না

Read More »
মহাকাশ মিশন
প্রযুক্তি

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ মহাকাশ মিশন

মানবসভ্যতার ইতিহাসে মহাকাশ মিশনগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তি, জ্ঞান এবং গবেষণার উন্নতির পাশাপাশি মহাকাশ অভিযানের খরচও আকাশচুম্বী। এ পর্যন্ত চালানো মিশনগুলোর মধ্যে কিছু মিশন এতটাই ব্যয়বহুল

Read More »
পার্কার সোলার প্রোব
বিজ্ঞান

পার্কার সোলার প্রোব: সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে ইতিহাস গড়ল নাসা

নাসার মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ সম্প্রতি সূর্যের সর্বাধিক নিকটবর্তী অবস্থানে পৌঁছে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সময় ২৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার, সকাল ১১টায় প্রোবটি সূর্যের

Read More »
কনকর্ড
বিজ্ঞান

কনকর্ড: শব্দের চেয়েও দ্রুত ছুটত যে বিমান

কনকর্ড বিমান, একটি সময়ে যা আকাশপথের রাজা হিসেবে বিবেচিত হতো, শব্দের গতির চেয়েও দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে ইতিহাসে নিজের নাম লিখে রেখেছে। ১৯৭৬ সালে এর

Read More »
মৌলের
বিজ্ঞান

পৃথিবীতে কোন মৌলের প্রাচুর্যতা সবচেয়ে বেশি?

পৃথিবী বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রাকৃতিকভাবে বা মানুষের দ্বারা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে পর্যায় সারণিতে ১১৮টি মৌল শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯২টি মৌল

Read More »